নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১৫, ২০২০
০৯:৫০ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ১৫, ২০২০
১০:০০ অপরাহ্ন
করোনাকালের এই সময়টাতে সিলেটে অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনলাইন মাধ্যমে এখন নগরের অনেক বাসিন্দাই কেনাকাটা করছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিদ্রব্য থেকে শুরু করে পোশাক ও কসমেটিক্স সামগ্রী অনলাইনে বেচাকেনা হচ্ছে। পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও গ্লাভসের বিক্রি এখন তুঙ্গে রয়েছে। ঘরবন্দী এ সময়টাকে গুরুত্ব দিয়ে সিলেটের বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, ফ্যাশন হাউস ও মুদি দোকান ফেসবুকে অনলাইন মার্কেটিংয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে। নগরবাসীও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটা করছেন।
বাদামবাগিচা এলাকার বাসিন্দা শাকিব আহমদ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা দেওয়ায় আমি ঘর থেকে বেরোচ্ছি না। তবে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কেনার জন্য বাইরে যেতে হয়। হঠাৎ কিছুদিন আগে একটি মুদি দোকানের অনলাইনে পণ্য সরবরাহের বিষয়টি আমার চোখে পড়ে। আমি সেখান থেকে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, সাবানসহ বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করি। লেনদেন করি বিকাশের মাধ্যমে। পরে এই দোকান কর্তৃপক্ষই রিকশা দিয়ে আমার কেনা সামগ্রীগুলো বাসায় পৌঁছে দেয়।’
শাকিব আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত হিসেবে কেবল রিকশা ভাড়া আমাকে তাঁদের দিতে হয়েছে। রিকশাওয়ালা বাসার নিচে পণ্যগুলো রেখে যায়। পরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে কিছুটা রোদ লাগিয়ে সেসব পণ্য বাসার ভেতরে ঢুকাই। অনলাইনের মাধ্যমে এই খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারার কারণে আমাকে বাসার বাইরে যেতে হয়নি। এটা একটা বড় সুবিধা।’ মেন্দিবাগ এলাকার গৃহিণী ফারহানা বেগম জানান, তাঁর কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ও গ্লাভসের প্রয়োজন ছিল। তিনি অনলাইনে এসব কিনে নিয়েছেন। এতে শঙ্কা নিয়ে তাঁকে আর বাজারে যেতে হলো না।
সিলেটে অনলাইন ব্যবসার প্রসার ঘটে বছর তিনেক ধরে। বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই নারী। প্রথমে ফেসবুক পেজের মাধ্যমেই অনেকে ব্যবসা শুরু করেন। পরে কেউ কেউ দোকানকোটা ভাড়া নিয়ে শোরুম চালু করেছেন। এমন একজন নারী উদ্যোক্তা আমাতা মাসুমা। সাত বছর আগে অনলাইন ব্যবসা শুরু করলেও প্রথমে তাকে হোচট খেতে হয়। এখন অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। পেসবুক পেজের মাধ্যমে দেশ এবং দেশের বাইরে থেকেও তিনি পণ্যের অর্ডার পাচ্ছেন। ‘আমাতা ক্লথিং’ নামে ফেসবুক পেইজ দিয়ে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মাসুমা। মূলত নারীদের পোশাক ও প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি করেন তিনি। তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে চালু হওয়া অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মেয়েদের পোশাক, শাড়ী, বুটিকস, প্রসাধন সামগ্রী প্রতিষ্ঠানই বেশি। এক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন অনেকে। ‘সিলেট অনলাইন শপ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ব্যবসা শুরু করে সফল হওয়ায় এখন তারা একাধিক শোরুম চালু করেছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেরও হোম ডেলিভারী সেবাও চালু করেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি সিলেটে চালু হয়েছে ‘ইবারু’ নামে এরকম একটি প্রতিষ্ঠান। স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের ১৭ জন সহপাঠি মিলে এটি শুরু করেছেন। ওয়েবসাইট ও অ্যাপসের মাধ্যমে তারা সেবা প্রদান করছে।
অনলাইনে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন জানিয়েছেন, করোনাকাল শুরু হওয়ার আগে সাধারণত অনলাইনে পোশাক ও কসমেটিক্স সামগ্রীই বেশি বিক্রি হতো। নারীরাই মূলত ছিলেন অনলাইনের ক্রেতা। কিন্তু এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দৃশ্যপট পাল্টেছে। এখন পোশাক ও কসমেটিক্স বিক্রি হচ্ছে না। এখন চাল, ডালসহ মুদিসামগ্রী এবং স্যানিটাইজার, ডেটল, সাবান, মাস্ক, গ্লাভস জাতীয় উপকরণ বেশি বিক্রি হচ্ছে। পুরুষরাই মূলত বাসার জন্য এখন কেনাকাটা অনলাইনে বেশি করছেন। এর ফলে বেচাকেনার অনলাইন পোর্টালগুলোও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের ব্যবসার ধরণও বদলে ফেলেছেন।
আজাদ রহমান নামের একজন অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতা জানান, তাঁরা আগে নারীদের জন্য পোশাকসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনার দিন শুরু হওয়ার পর তাতে ভাটা পড়ে। তবে হঠাৎ করেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, পিপিই ও গ্লাভসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, তাঁরা সেসব সামগ্রী বিক্রি করার বিষয়টি ঘটা করে প্রচার দেন। এতে ক্রেতারাও এসব সামগ্রী কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। প্রতিদিনই তাঁরা নগরের প্রায় এলাকা থেকে একাধিক ক্রেতা পান। দ্রুততার সঙ্গে তাঁরা সামগ্রীগুলো ক্রেতাদের নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেন। তবে পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস পরে তাঁরা নিরাপদে থেকেই এসব সামগ্রী পৌঁছে দেন বলে জানিয়েছেন। অনলাইন মাধ্যমের সহায়তা নিয়ে ওষুধ ও ইলেকট্রনিক পণ্য কেনাকাটার পরিমাণও বেড়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
কয়েকজন বিক্রেতা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা অনলাইনে বাড়লেও ডেলিভারি পারসন বা সরবরাহকারী কর্মীর সংকটের কারণে অনেক অনলাইনকেন্দ্রিক উদ্যোক্তারা হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক অনলাইনকেন্দ্রিক ব্যবসা চালু করে আবার নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন কেবল ওই কারণে। তবে ঈদকে উপলক্ষ করে এরই মধ্যে বিভিন্ন পোশাক ও কমমেটিক্স বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান অনলাইনে সরব হয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে অনলাইনে আসলেই মানুষজন ঈদের কেনাকাটা করেন কি না!
সিলেট নগরের কাজীটুলা এলাকার বাসিন্দা জাবেদ হোসেন বলেন, ‘করোনাকালের এই সময়টাতে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া অনলাইনে কেনাকাটা করাটা উচিত নয়। কারণ, কখন কোন বিক্রয়কর্মী করোনাভাইরাস ছড়াতে পারেন, সেটা তো নিশ্চিত করে বলা যায় না। হাটবাজারে যাওয়া এড়াতে চাল, ডাল ও ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সম্ভব হলে অনলাইনে কেনাকাটা করা যেতে পারে। তবে বাসায় এসব সামগ্রী ঢুকানোর আগে সেসব যথাযথভাবে নিজেদের স্বার্থেই পরিচ্ছন্ন করে নেওয়া প্রয়োজন। এসব সামগ্রীর বাইরে কেবলমাত্র শখের বশে পোশাক ও কসমেটিক্স কিংবা এ জাতীয় অন্য কোনো সামগ্রী এখন কেনাকাটা না করাই ভালো।’
এএন/বিএ-০১