রাফিদ চৌধুরী
মে ১৫, ২০২০
১০:২২ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ১৫, ২০২০
১০:৫৪ অপরাহ্ন
যে মঞ্চ থেকে বাতাসে ভেসে বেড়ায় নাটকের সংলাপ, নূপুরের ঝংকার, কবিতা কিংবা বক্তব্য, সে মঞ্চে এখন অন্য আয়োজনে ব্যস্ত সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা। করোনা কালে অসহায় হয়ে পড়া মানুষদের, সুবিধাবঞ্চিত, শ্রমজীবী মানুষের জন্য খাদ্যসামগ্রী প্যাকেটজাত করেই বড় একটা সময় অতিবাহিত করছেন তারা। অন্যদিকে অনলাইনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে সময় পার করছেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা।
হোম কোয়ারেন্টিনের দিনগুলোতে সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের সময় কিভাবে কাটছে সেটা জানার চেষ্টা করেছে সিলেট মিরর।
ঘরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন গীতিকবি শামসুল আলম সেলিম। ঘরে বসে থাকতে থাকতে মস্তিষ্কে নাকি তার জং ধরেছে। তাই কোনো লেখা আসছে না। মুহূর্ত কয়েক আগেই চারটি লাইন মাথায় এলে লিখে নেন তা। আর ঠিক তখনই সিলেট মিরর প্রতিবেদকের ফোন। লাইন চারটি পড়েও শোনান এই প্রতিবেদককে। তারপর শোনালেন ঘরবন্দি জীবনের কথা।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেলিম বলেন, দিনের দুই ঘন্টা সময় শুধু কাটে নগরের রিকাবিবাজারের কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে। বাকি সময়টা বাসায় পরিবারের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে অনেকদিন পর দীর্ঘসময় কাটানো। যা সচরাচর হয় না। এই সুযোগে তা ভালোভাবেই হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সিলেটে এমনিতে সবসময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড আরও বেশি হওয়ার সুযোগ ছিল। তবে করোনাভাইরাসের কারণে সেটা হয়নি। যদিও অনলাইনের মাধ্যমে সিলেটের বিভিন্ন সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। তাই করোনাকালিন মুহূর্তেও আয়োজন থেকে বঞ্চিত নেই কেউ।
অনলাইনে সিলেটের বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করছে সাংস্কৃতিক আয়োজন বা আড্ডার। ২ এপ্রিল থেকে ‘একদল ফিনিক্স’ সিলেটে অনলাইন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন শুরু করে। পরে ‘মৃত্তিকায় মহাকাল’ দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে শুরু করে অনলাইন আয়োজনের। এছাড়া আরও অনেক সংগঠন সেটা শুরু করে। ‘পাঠশালা’ সিলেটের উদ্যোগে অনলাইনে বাচ্চাদের নিয়ে শুরু হয়েছে কার্যক্রম। যে আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘পাখি সব করে রব’। এছাড়া দর্পণ থিয়েটার তাদের নিয়মিত পাঠচক্রের বদলে অনলাইনে শুরু করেছে ‘থিয়েটার সংলাপ’। যেখানে নাট্যজন্যরা নবীন নাট্যকর্মীদের সঙ্গে নাটকের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এই বিষয়ে নাট্যকর্মী হুমায়ূন কবীর জুয়েল বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে। এতে করে আমরা সবাই অস্থির সময় কাটাচ্ছি। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য খুবই কষ্টকর। সে চিন্তা থেকেই বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য পাঠশালার পক্ষ থেকে আয়োজন। বাসায় বসে যেন নতুন কিছু জানা যায় সে চিন্তা থেকেই আমাদের আয়োজনগুলো।
এদিকে পরিবারের সঙ্গে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় কাটাচ্ছেন বলে জানালেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমেদ চৌধুরী মিশু।
তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে মুহূর্তগুলো কাটানোর জন্য উপযুক্ত একটি সময়। তাই পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছি। তাছাড়া দিনের অনেকটা সময় অডিটোরিয়ামে কাটাচ্ছি। করোনায় দুর্গতদের সহায়তায় নাট্যকর্মীরা পৌঁছে দিচ্ছি উপহারসামগ্রী। ফোনকলের মাধ্যমে দুর্গতদের প্রয়োজন জানার পর গাড়ি করে উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন আমাদের নাট্যকর্মীরা। আমরা এর নাম দিয়েছি কলের গাড়ি। দিনের একটা বড় সময় কলের গাড়ির কাজেও সাহায্য করছি।
করোনা না হলে এখন কি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে হয়তো মুজিব বর্ষ উপলক্ষে নতুন কোনো আয়োজনের পরিকল্পনা করতাম। প্রস্তুতি গ্রহণ করতাম। অডিটোরিয়ামে ব্যস্ত সময় কাটতো। তবে করোনা এলেও আমরা কিন্তু অডিটোরিয়ামেই সময় কাটাচ্ছি। নাটক বা সংস্কৃতি সবসময়ে মানুষের কথা বলে। আমরা মানুষের জন্যই কাজ করি সবসময়। এখনও সেটাই করে যাচ্ছি।
দিনের মধ্যে ১৪ ঘন্টা সময় কলের গাড়ির সঙ্গে কেটে যায় বলে জানালেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত। তিনি বলেন, সারাদিন মানুষের কল গ্রহণ করা, তালিকা প্রস্তুত করা, কাউকে পাঠানো বাদ গেল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা। তাই সময়টা ব্যস্ততাতেই কেটে যাচ্ছে।
মুজিববর্ষ তাহলে দারুণভাবে ব্যতিক্রমী আয়োজনে পালিত হচ্ছে কি না জানতে তাইলে তিনি বলেন, তা তো অবশ্যই। করোনাভাইরাসের প্রভাব না পড়লে জৌলুশপূর্ণ আয়োজনে আমরা ব্যস্ত থাকতাম। প্রচুর অর্থও ব্যয় করতাম। তবে আমাদের আশেপাশে অনেক অসহায় মানুষ থেকে যেতেন, যাদের কোনো খোঁজ রাখা হত না। করোনার কারণে আমরা এখন সে কাজটাই করছি, যার স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের এই দূর্যোগপূর্ণ সময়েও সুবিধাবঞ্চিতদের ক্ষুধার্ত না রাখার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
মানুষের কথা বলার জন্য নয় বরং এই সময়টাকে মানুষের জন্য কাজ করার বলে মনে করছেন নাট্য পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় দেব শান্ত। তিনি বলেন, আমরা নাট্যকর্মী বা সংস্কৃতিকর্মীরা সবসময় মানুষের কথা বলি। এখন যেহেতু মানুষের জন্য কথা বলার সুযোগ নেই, তাই মানুষের জন্য কাজ করছি। মানুষের জন্যই আমরা। তাই আমাদের কাছে এটা বাড়তি কোনো কিছু নয়। করোনা না আসলে আমরা হয়তো নাটক নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। করোনা আসায় আমরা মানুষের কাছে উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছি।
আরসি-০১/বিএ-০২