মো. নাবিল এইচ
মে ১৭, ২০২০
১০:৩১ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ১৭, ২০২০
১০:৫৭ অপরাহ্ন
আজ রবিবার দুপুরে সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার চিত্র।
করোনায় দেশ এক সংকটকালীন মুর্হুত পার করছে। দেশে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। একইভাবে সিলেটেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। লকডাউন ভেঙ্গে মানুষ ঘরের বাইরে বের হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। আর স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন এখনি যদি মানুষকে সতর্ক করা না যায় তাহলে ভয়াবহ অবস্থা হবে সিলেটে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রথম দিকে বিভাগের হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিল ঢাকা, নায়ারণগঞ্জ, গাজীপুর ফেরত। কিন্তু গত কিছুদিন থেকে সিলেট জেলায় বাড়তে শুরু করেছে আক্রান্তের হার। এর প্রধান কারণ হলো জনগণের অসেচতনতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে প্রতিদিন যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে যদি জনগণ সচেতন না হয় তাহলে সিলেটের জন্য তা হবে ভয়াবহ। যেকোনো ভাবে সিলেটের সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে হবে।’
আনিসুর রহমান বলেন, জনগণ যেভাবে ঘর থেকে বের হচ্ছে তাতে আমরা হতাশ। কারণ বিশ্বের সবাই যখন ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তখন হাটে-বাজারে এই ভিড় সিলেটবাসীর জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে।’
তিনি আরও বলেন, এখন তো সিলেটের রাস্তাঘাট দেখলে বুঝাই যাচ্ছে না আমরা করোনার সংকটকালীন সময় পার করছি। বিভিন্ন পয়েন্টে জ্যাম লেগে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে অনেকের মুখে নেই মাস্কও। মানা হচ্ছে না সামাজিক দুরত্ব। এসব চিত্র আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপদ টেনে আনবে। সিলেটে আক্রান্ত কমাতে হলে র্হাডলাইনে গিয়ে হলেও মানুষকে ঘরে রাখতে হবে এবং শক্তভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তিনি।
আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা হয়ত বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত একটা সভায় বসব। তবে মানুষের মধ্যে যদি সচেতনতা বৃদ্ধি না হয় তাহলে কোনো কিছুই কাজে আসবে না।’
এদিকে আজও (১৭ মে) সিলেট জেলায় আরও ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এনিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৪। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৬৯, হবিগঞ্জে ১২৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর আজ নতুন ৪ জনসহ মৌলভীবাজারে মোটআক্রান্ত ৬৫। এর আগে বিভাগের হটস্পট হবিগঞ্জকে বলা হলেও এখন আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সিলেটে। তাই এখন সিলেটকেই হটস্পট বলা হচ্ছে।
করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সিলেটের রাস্তায় বাড়ছে মানুষের ভিড়। এদিকে কাল থেকে নগরের হাসান মার্কেট, হকার মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও এর আগে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উদ্যোগে সিলেটের ব্যবসায়ীরা নগরের সব দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
মার্কেট খোলার সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে মনে করছেন সিলেটের সুশীল সমাজ। তারা মনে করছেন যেখানেই জনসমাগম হবে সেখানেই এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে। তাই অবিলম্বে ব্যবসায়ীদের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তারা।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ বলেন, ‘আক্রান্তের হার কমাতে হলে ঘরে থাকতে হবে। আর মানুষকে ঘরে রাখতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই তারা যাতে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।’
তিনি আরও বলেন ‘প্রধানমন্ত্রী মার্কেট খুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা থেকেও সরে আসতে হবে। কারণ দেশে প্রতিদিন ব্যাপক হারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। রাস্তায় কেউ বের হলেই তাকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যদি কেউ অকারণে বের হয়ে থাকেন তাকে জরিমানা করতে হবে। উন্নত বিশ্বসহ সবাই ঘরে থাকার এমন নীতিপ্রয়োগ করছে উল্লেখ করে আমাদেরও এই নীতির বাইরে যাওয়ার অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেন সুজন সভাপতি ফারুক মাহমুদ।
এনএইচ/বিএ-০১