উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
মে ১৮, ২০২০
১১:৩৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ১৮, ২০২০
১১:৩৯ পূর্বাহ্ন
করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে ওসমানীনগরে। ইতোমধ্যে উপজেলার দয়ামীর, গোয়ালাবাজার ও তাজপুর এলাকায় ৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের। কিন্তু এরপরও সাধারণ মানুষর মাঝে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে না। এখনও হাট-বাজারগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষাহীন সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড়, ছুটির মেজাজে আড্ডাবাজি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
করোনার সংক্রমণ রোধে উপজেলার প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র গোয়ালাবাজার ও দয়ামীর বাজার বণিক সমিতি কর্তৃক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে, উপজেলার অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র তাজপুর বাজারে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। সরকার স্বাস্থ্যবিধি ও পারস্পরিক দূরত্ব মেনে ব্যবসা পরিচালনার নির্দেশ দিলেও তাজপুরের বেশিরভাগ ক্রেতা-ব্যবসায়ীর মধ্যে তেমন সচেতনতা চোখে পড়ছে না। এতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার মারাত্মক আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ওসমানীনগরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৩০ এপ্রিল। দয়ামীর ইউনিয়নের রাইকদাড়া (নোয়াগাঁও) গ্রামের ৫৫ বছরের এক ব্যক্তি ভাইরাস আক্রান্ত হন। গত ২৬ এপ্রিল শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে ওই ব্যক্তি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকরা সন্দেহজনক মনে করে এই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে প্রেরণ করেন। এরই মধ্যে রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন। তারপর ওসমানীনগরের ওই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ জানিয়ে রিপোর্ট আসে।
গত ৫ মে ওসমানীনগরে ২য় করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। আক্রান্ত ঢাকা ফেরত ২৪ বছর বয়সী তরুণ গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের পূর্ব ব্রাহ্মণ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কয়েকদিন আগে বালাগঞ্জে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে কিছুটা অসুস্থতাবোধ করলে করোনা সন্দেহে নমুনা পরীক্ষা করতে দেন। পরবর্তীতে তার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। ১৫ মে উপজেলার তাজপুরে ৩য় করোনা রোগী হিসেবে শনক্ত করা হয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সিলেট-১ এর ওসমানীনগর খাশিকাপন জোনাল অফিসে একজন লাইন টেকনিশিয়ানকে। তিনি তাজপুর বাজারের হাজী মশ্রব আলী কমপ্লেক্সে স্বপরিবারে পঞ্চম তলায় বসবাস করে আসছেন। তার করোনা শনাক্তের পর হাজী মশ্রব আলী কমপ্লেক্স লকডাউন করা হয়। ১৬ মে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান তাজপুর দুলিয়ারবন্দ এলাকার এক রিকশাচালক (৫০)। ওই ব্যক্তির মূল বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায়। মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
দয়ামীর এলাকার বাসিন্দা জাহির আহমেদ মোহন বলেন, ওসমানীনগরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে আমাদের এলাকায়। উনি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। জেনেছি উনি এখন সুস্থ আছেন। কিন্তু আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। বাজারে ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন দোকান বন্ধ রাখার কিন্তু অনেকেই কথা রাখেননি। সচেতন না হলে করোনা ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র।
গোয়ালাবাজার এলাকার বাসিন্দা রুহেল আহমেদ বলেন, করোনা শনাক্তের পর থেকেই আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। বাজার এলাকায় যেভাবে অবাধে চলাফেরা করা হচ্ছে তা সত্যিই আতঙ্কের। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
তাজপুর এলাকার বাসিন্দা শাওন রাসেল বলেন, আমি পল্লীবিদ্যুতের কর্মীদের বাড়িতে মিটার রিডিংয়ে যাওয়া নিয়ে প্রথম দিন থেকেই সোচ্চার ছিলাম। সচেতন হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলেছি। এর দুদিন পর পল্লী বিদ্যুতের কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের সচেতন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, করোনা মহামারি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। করোনা ভয়াবহ সংক্রামক হওয়ায় মাস্ক, গ্লাভসের ব্যবহার ও ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ব্যবসা পরিচালনা করলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে। এসব ব্যাপারে শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এনপি-১১