উপকূল অতিক্রম করছে আম্পান, ৫ জেলায় ৬ জনের প্রাণহানি

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ২১, ২০২০
০৪:৫২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২১, ২০২০
০৫:০০ পূর্বাহ্ন



উপকূল অতিক্রম করছে আম্পান, ৫ জেলায় ৬ জনের প্রাণহানি

বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করছে ঘুর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানের একটি অংশ আজ বিকেলে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চল দিয়ে ঢুকে। ঘুর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ থেকে জামালপুর হয়ে আজ রাতেই বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করবে।

এদিকে আম্ফানের প্রভাবে ঝড়ে গাছ ও দেয়াল চাপা এবং জলোচ্ছ্বাসে ৫ জেলায় ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের মূল অংশ ভারতের উপকূলে আঘাত হানায় বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি কম হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আজ বুধবার (২০ মে) বিকেলে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তের সুন্দরবন অংশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। তবে আঘাতটা প্রথমে করেছে পশ্চিমবঙ্গ অংশে। সে কারণে পশ্চিমবঙ্গে বাতাসের গতিবেগ অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় পরে আঘাত করায় বাতাসের গতিবেগও কম। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বাংলাদেশ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আম্পান বাংলাদেশের যশোর ও নড়াইল জেলার দিকে আজ রাতেই চলে যাবে। সেখান থেকে মাগুরা, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ থেকে জামালপুরের দিকে এগিয়ে যাবে আজ রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। বুধবার রাত ৯টার দিকে আবহাওয়াবিদ নাজমুল হোসেন এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিয়ে অগ্রসর হয়ে বিকেল ৪টা নাগাদ সাগর দ্বীপের পূর্বপাশ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করে।

এটি সন্ধ্যা ৬টায় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় (সুন্দরবন এলাকা) অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিতে অগ্রসর হয়ে পরবর্তী ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। 

অধিদম্পতর বলছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। যা দমকা হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘আম্পান’ এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসলগ্ন এলাকা উত্তাল রয়েছে। 

এদিকে, আম্ফানের প্রভাবে ঝড়ে গাছ ও দেয়াল চাপা এবং জলোচ্ছ্বাসে ৫ জেলায় ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বুধবার (২০ মে) দুপুরে পুলিশ জানায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বয়স্ক ভাতা নেয়ার জন্য যাচ্ছিলেন ছিদ্দিক ফকির। এ সময় দক্ষিণ আইচা এলাকায় তার ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর মৃত্যু হয়।

পটুয়াখালীর গলাচিপার পানপট্টি ইউনিয়নে বাবা মায়ের সাথে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়লে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশু রাশেদের। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পটুয়াখালীর ডিসি মতিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সকাল ৯ টার দিকে কলাপাড়া উপজেলায় প্রচার চালাতে গিয়ে খালে পড়ে নিখোঁজ হন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির ৬ নম্বর ইউনিট টিম লিডার সৈয়দ শাহ আলম। ৯ ঘণ্টা পর তার মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। নৌকায় করে তারা চারজনে প্রচার করছিলেন।

সাতক্ষীরার পৌরসভার কামালনগর এলাকায় আম কুড়াতে গিয়ে গাছ চাপায় এক নারী এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া দেয়াল চাপায় এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রামে স্বন্দীপে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে এক য্বুকের মৃত্যু হয়েছে।

আম্ফানের তাণ্ডবের শিকার হচ্ছে উপকূলীয় জেলাগুলোর অধিবাসীরা। খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় আম্পানের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে নিঝুম দ্বীপ, চরঈশ্বর, নলচিরা, সুখচর ও চরকিং ইউনিয়নের শতাধিক কাঁচা ঘর।

নিঝুমদ্বীপ, কেরিংচর, নলেরচর, বয়ারচর ও ঢাল চরের নিচু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার অধিকাংশ লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন ও সিপিপির কর্মীরা।

সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে গাছ পড়ে, তার ছিঁড়ে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে উপকূলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অন্তত ১৭টি সমিতির ১০ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এর বাইরে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বা ওজোপাডিকোর প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশালের কিছু অংশ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরাসহ উপকূলের ১৭টি সমিতির ৫০ থেকে ৬০ ভাগ লাইন বন্ধ হয়ে গেছে।

এএন/বিএ-২০