জগদীশ মোদক ও নলিনী কান্ত রায় সাময়িক বরখাস্ত

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুন ০২, ২০২০
১০:২৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০২, ২০২০
১০:২৭ পূর্বাহ্ন



জগদীশ মোদক ও নলিনী কান্ত রায় সাময়িক বরখাস্ত

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি জগদীশ চন্দ্র মোদক এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নলিনী কান্ত রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

হবিগঞ্জের একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের জেরে মামলা দায়ের ও নির্বাহী নির্বাহী সম্পাদককে গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে কথিত মতবিনিময় সভা আয়োজন করায় তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পদ থেকে তাদেরকে কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না এক সপ্তাহের মধ্যে তা-ও জানাতে বলা হয়েছে দুই সংগঠনের নোটিশে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্ত এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্মল কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী নোটিশ দুটিতে স্বাক্ষর করেন। 

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নোটিশ গতকাল সোমবার (১ জুন) সংগঠনের হবিগঞ্জ শাখার সভাপতি জগদীশ চন্দ্র মোদকের কাছে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়- ‘শ্রী সুশান্ত দাস গুপ্ত কর্তৃক সম্পাদিত অনলাইন পত্রিকা ‘ক্সদনিক আমার হবিগঞ্জ’-এ গত ১৯-০১-২০২০, ১৬-০৪-২০২০ ও ১৮-০৪-২০২০ ইং তারিখে প্রকাশিত সংবাদসমূহকে নিয়ে, কেন্দ্রীয় কমিটির জানামতে, ইতোমধ্যে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’-এ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন আছে, যার নম্বর- হবিগঞ্জ থানা মামলা নম্বর- ১১(০৫)২০২০। 

উক্ত মামলা বিচারাধীন থাকাবস্থায় গত ৩০ মে, ২০২০ ইং তারিখে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কথিত মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্তাবলী কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ইতোমধ্যে এ কথিত সিদ্ধান্তে ঐক্য পরিষদের উপস্থিতি এবং আপনার সহি’র বিরুদ্ধে নানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঐক্য পরিষদকে অহেতুক গালমন্দ ও বিষোদগার করে নানান জন নানান মন্তব্য করেছেন, যা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টিতে এসেছে। দেশের ও বিদেশের নানান জায়গা থেকে এ ব্যাপারে অভিযোগও উত্থাপিত হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও স্থানীয় সাংসদ মো: আবু জহির-কে জড়িয়ে উক্ত অনলাইন পত্রিকা কিংবা ফেইসবুকে কোন সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়নি। ভিন্ন সংবাদের পরিপোষকে, যা বর্তমানে বিচারাধীন, তার সাথে সংখ্যালঘু স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন বিষয় জড়িত নেই, এহেন কথিত সিদ্ধান্ত সর্বতোভাবে অবান্তর, অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক বলে কেন্দ্রীয় কমিটির মনে হয়েছে এবং এহেন কথিত সিদ্ধান্তে আপনার সহি সংগঠনের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে।

এমতাবস্থায়, সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৭(ঙ)(২) ধারামতে কথিত মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্তে আপনার প্রদত্ত স্বাক্ষর-কে সংগঠনের শৃংখলা পরিপন্থি বিবেচনায় ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলার সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে সাময়িকভাবে আপনাকে সাসপেন্ড (Suspend) করা হলো। এমতাবস্থায়, আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে আগামী ৭(সাত) দিনের মধ্যে কেন সংগঠনের গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজের জন্যে আপনার জেলা কমিটির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে না তৎমর্মে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বরাবরে ই-মেইলের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার জন্যে অত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ আপনার বরাবরে প্রেরণ করা হলো।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট নলিনী কান্ত রায়কে  কেন্দ্র থেকে নোটিশ পাঠানো হয় গত রবিবার (৩১ মে)। 

এতে বলা হয়- ‘হবিগঞ্জ হতে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকা "দৈনিক আমাদের হবিগঞ্জ " -এ ১৯ জানুয়ারী ২০২০, ১৬এপ্রিল ২০২০, ১৮এপ্রিল ২০২০ ও ১৭ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত সংবাদসমুহকে নিয়ে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জনাব সায়েদুজ্জামান উক্ত অনলাইন পত্রিকার প্রকাশক ও নির্বাহী সম্পাদক শ্রী সুশান্ত দাশগুপ্ত ও অপর তিনজনের বিরূদ্ধে ২৫ মে ২০২০ তারিখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। থানার মামলা নম্বর ১১/২০২০।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির জানামতে উক্ত মামলায় অভিযুক্ত শ্রী সুশান্ত দাশগুপ্তকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

উক্ত বিচারাধীন মামলা চলমান থাকা অবস্থায় গত ৩০ মে ২০২০ তারিখ স্থানীয় শ্রীশ্রী কালীমন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখা ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার এক যৌথ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

কথিত মতবিনিময় সভার গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উক্ত কথিত সভায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলা শাখার উপস্থিতিতে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহে আপনার স্বাক্ষরের বিরূদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ অহেতুক অভিযোগ, গালমন্দ ও বিষোদগারের শিকার হচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি ,স্থানীয় সংখ্যালঘুসম্প্রদায়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন বিষয়কে সম্পৃক্ত করে সম্মানিত স্থানীয় সংসদ সদস্য জনাব আবু জাহিদকে জড়িয়ে উক্ত অনলাইন পত্রিকা বা ফেসবুকে কোন সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়নি। বিচারাধীন যে মামলার সাথে সংখ্যালঘুদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোন বিষয় জড়িত নেই, এহেন কথিত সিদ্ধান্ত সর্বতোভাবে অযৌক্তিক, অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে মনে হয়েছে এবং এহেন কথিত সিদ্ধান্তে আপনার সহি সংগঠনের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুন্ন করেছে। তদুপরি মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় উক্ত বিষয় নিয়ে কোন ধরনের সভা না করা ও কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আপনি উক্ত নির্দেশ উপেক্ষা করে সভা করেছেন। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনার আলোকে কোন ধরনের সভা সমাবেশ না করার কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ব নির্দেশ সত্বেও প্রায় শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে উক্ত সভায় আপনি অংশ গ্রহণ করেছেন, যা সংগঠনের শৃঙ্খলার পরিপন্থী।

এমতাবস্থায় কথিত মতবিনিময় সভায় আপনার অংশগ্রহণ ও কথিত সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর প্রদান সংগঠনের শৃংখলার পরিপন্থী বিধায় গঠনতন্ত্রের ৭(ছ) ধারার আওতায় হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতির পদ থেকে আপনাকে সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হলো এবং সংগঠনের শৃংখলা বিরোধী কাজের জন্যে কেন আপনার বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হবিগঞ্জ জেলার সভাপতি পদ স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে না, তৎমর্মে ৭ (সাত) দিনের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বরাবর ই-মেইল এর মাধ্যমে জবাব দেওয়ার জন্য অত্র কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হলো।’

এনপি-০১