সিলেট মিরর ডেস্ক
জুন ০২, ২০২০
১২:১২ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ০২, ২০২০
১২:১২ অপরাহ্ন
করোনা মহামারীর প্রভাবে দেশের ৭৪ ভাগ পরিবারের আয় কমে যাওযার চিত্র উঠে এসেছে এক সমীক্ষায়। ব্র্যাক, ডেটা সেন্স ও উন্নয়ন সমন্বয়ের এ যৌথ সমীক্ষায় দেখা যায়, নিম্নআয়ের মানুষকে অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবিত করা এই মহামারীতে দেশের মানুষের পারিবারিক উপার্জন গড়ে ৭৪ শতাংশ কমে গেছে। একই সঙ্গে ৭৪ ভাগ পরিবারেরই আয় কমেছে।
অর্থাৎ, আগে যে পরিবার ১০০ টাকা আয় করত, এখন সেখানে আয় হচ্ছে মাত্র ২৬ টাকা।
সোমবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে 'করোনা এবং জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১: নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক ওই সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন আইসোশ্যাল নামক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. অনন্য রায়হান।
গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, নিম্নআয়ের মানুষকে অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবিত করা এই মহামারীর ফলে দেশের প্রায় ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার ঝুঁকিতে রয়েছে।
১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন কিংবা ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন বলেও উল্লেখ করা হয় ওই গবেষণায়।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র। এদের মধ্যে নতুন করে চরম দরিদ্র হয়ে পড়া পরিবারগুলোও রয়েছে। উচ্চ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা চরম দরিদ্রের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৩ লাখ এবং উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ৩ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ।
জরিপে দেখা গেছে, কোভিড-১৯ এর কারণে নিম্নআয়ের মানুষের উপর বহুবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
যেসব পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। দিনমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
উৎপাদন খাতে কোভিড-১৯ এর ধাক্কা লাগার কথা উল্লেখ করে গবেষণায় বলা হয়, তৈরিপোশাক খাতে রপ্তানি এপ্রিল ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিলে ৮৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে ৭ এপ্রিলের মধ্যে ১ হাজার ১১৬টি কারখানা বন্ধ ঘোষিত হয়েছে এবং চাকরি হারাতে পারেন প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক।
করোনাভাইরাস কীভাবে নতুনভাবে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টি করছে তা তুলে ধরে গবেষক অনন্য রায়হান বলেন, কেবল ৩৪% পরিবারের স্মার্টফোন রয়েছে এবং ৫৪% পরিবারের টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে। অতএব, এর নিচের অংশে বসবাসকারী শিশুরা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে।
বিদেশে থাকা অভিবাসীরাও এখন ঋণচক্র ও সামাজিক কলঙ্কের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সমীক্ষাটিতে ব্র্যাক, বিআইজিডি, পিপিআরসি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত গবেষণা-সমীক্ষার পর্যালোচনার পাশাপাশি একটি জরিপও পরিচালনা করা হয়েছে।
জরিপে দেশের ২৫ জেলায় দৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচিত ৯৬২ জন ব্যক্তির সঙ্গে গত মাসের ১৫-১৮ তারিখে কথা বলেছেন গবেষকরা।
বাজেটে নিম্নআয়ের মানুষকে রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করে ভার্চুয়াল আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক আতিউর রহমান বলেন, এবারের বাজেট হোক বেঁচে থাকার বা টিকে থাকার বাজেট। কোভিড-১৯ এর এই মহামারিতে সবচেয়ে হুমকির মুখে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। মধ্যবিত্তরাই চিকিৎসাসেবা পাবেন কি না, সেই আতঙ্কে আছেন, দরিদ্রদের অবস্থা তো আরও করুণ। স্বাস্থ্যখাত ঠিক না করলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, আমাদের অর্থনীতিও আগাবে না।
নগদ সহায়তা দেওয়ার যে কার্যক্রম সরকার শুরু করেছে, সেটাকে বাজেটের মাধ্যমে আরও ত্বরান্বিত করার সুপারিশ করেন আতিউর।
সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যকের চেয়ারপার্সন হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এখন নতুন তালিকা তৈরির সময়ক্ষেপণের দিকে না গিয়ে আগের তালিকা ধরেই কাজ করা শ্রেয়। ৭৮ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে যে ১০০ টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, তা এখনই ৫০০ টাকায় উন্নীত করা দরকার। এতে করে সঠিক জায়গায় সহায়তা পৌঁছানো অনেকটা নিশ্চিত হবে। শুধু বরাদ্দ করলেই হয় না, সবার সুবিধা-অসুবিধা শুনে দক্ষতাপূর্ণ, কার্যকর ও কৌশলী বাজেট করতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে হাঁটতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষ হিসেবে বটম অফ দি পিরামিডে শুধু শ্রমিকেরা নয়, অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও আছেন। প্রণোদনা দেওয়ার পরেও শ্রমিকদের ৬০% বেতন দেওয়া হয়েছে। তাদের বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ তো কমেনি। তাই এই মুহূর্তে বেঁচে থাকার জন্য যাদের প্রয়োজন বেশি তাদের প্রণোদনা বা ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
অনলাইন ব্যবসার উদ্যোক্তা বাড়ার কথা তুলে ধরে স্মার্ট ফোনের দাম সুলভ করে ইন্টারনেট খরচ কমানোর সুপারিশ করেন তিনি।
বিএ-০৪