পাট শাক চাষে ঝুঁকছেন মাধবপুরের কৃষকরা

এস এম রাকিব, মাধবপুর


জুন ০৪, ২০২০
০৪:২১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৪, ২০২০
০৪:২১ পূর্বাহ্ন



পাট শাক চাষে ঝুঁকছেন মাধবপুরের কৃষকরা

সোনালী আঁশ পাট। পাট অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত। সেজন্য কৃষকরা পাট চাষ করতেন। তবে বর্তমানে পাট চাষের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ও বাজারে চাহিদা না থাকায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। ব্যতিক্রম নয় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলাও। কয়েকবছর আগেও উপজেলার বিভিন্ন-প্রান্তের কৃষকরা পাট চাষ করতেন। এখনও উপজেলার কৃষকরা পাট চাষ করেন। তবে এখন আর পাট তোলার জন্য নয়, বরং শাক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য চাষ করেন। গত কয়েক বছরে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পাট শাকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরাও শাক চাষে ঝুঁকছেন।

আর শাক উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে পাটের উৎপাদন। এতে কৃষকের পাশাপাশি সরকারও প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যদিও এ নিয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ পুরোপুরি নির্বিকার।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, এবার উপজেলায় শাহজাহানপুর, আদাঐর, বুল্লা, ছাতিয়াইন ও বাঘাসুরা ইউনিয়ন মিলিয়ে ৩৩০ হেক্টর জায়গাজুড়ে দেশি, তোষা, কেনাক, মেস্তাসহ বিভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছে। বিশেষ করে নিচু এলাকায় পাটের আবাদ বেশি হয় বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

আজ বুধবার (৩ জুন) মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, এসব স্থানে বিভিন্ন জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। তবে বেশিরভাগ কৃষকই পাটের আঁশের বদলে পাট শাককে প্রাধান্য দিচ্ছেন।

উপজেলার ছতিয়াইন গ্রামের নায়িম হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনে চাষ, সার, বীজ কিনতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার টাকা। জমিতে বাছাই খরচ হয় ২ হাজার টাকা এবং পাট কাটা ও জাগ (পানিতে ভিজিয়ে রাখা) দিতে ব্যয় হয় ৩ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে একজন কৃষকের মোট ব্যয় হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। অথচ এক বিঘা জমিতে ভালো আবাদ হলে পাট পাওয়া যায় ৮ থেকে ৯ মণ। গতবার উঠতি বাজারে মণপ্রতি ১১০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাট চাষ করে লাভের বদলে পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় থাকতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্যদিকে সমপরিমাণ জায়গায় পাট শাক আবাদ করলে লাভ হয় খরচের দ্বিগুণ। আর এতে করে এখন অনেকেই পাট শাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’

একই কথা বলেন উপজেলার মাহবুবুল আলম নামের আরেক কৃষক। তিনি বলেন, ‘বাজারে পাটের চাহিদা না থাকায় আমাদের পাট চাষে আগ্রহ নেই। তবে পাটের শাকের চাহিদা বাজারে অনেক বেশি। আর এক বিঘা জমি থেকে পাট শাক চাষ করে ৪০ দিনের মধ্যে ফসল উৎপাদন করে তা বিক্রি করা যায়। এতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়।’

এংরাজ মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, ‘এবার ১ বিঘা জমিতে পাট শাক উৎপাদন করে এ পর্যন্ত ১১ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আরও জমিতে যে ফসল আছে তা বাজারে বিক্রি করলে ৭-৮ হাজার টাকার মতো পাওয়া যাবে।’

এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এবার উপজেলার ৩৩০ হেক্টর এলাকাজুড়ে দেশি, তোষা, কেনাক, মেস্তাসহ বিভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছে। নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পাট পচানো ও নিড়ানোর অনিশ্চয়তায় পাট চাষের একটা বড় সমস্যা বলে মনে করেন অনেক কৃষক। তার পরেও উপজেলার শাহজাহানপুর, আদাঐর, বুল্লা, ছাতিয়াইন ও বাঘাসুরা ইউনিয়নের কিছু অংশে পাট চাষ হয়েছে।’

 

এসএম/আরআর-১৩