মাহিরের বিরুদ্ধে মামলা: শাবির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

শাবি প্রতিনিধি


জুন ১৭, ২০২০
০২:৫৫ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১৭, ২০২০
০২:৫৫ অপরাহ্ন



মাহিরের বিরুদ্ধে মামলা: শাবির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা নাসিমকে নিয়ে 'কটুক্তি' করে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই মামলাকে হয়রানিমূলক ও অযৌক্তিক দাবি করে এর নিন্দা জানিয়ে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার (১৭ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সম্বলিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে ১১২০ জন বর্তমান ও ২৮৬ জন সাবেক শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মাহির চৌধুরী ফেসবুক লাইভে এসে তার পূর্বোক্ত মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে এই অমানবিক ও বিতর্কিত আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নামে-বেনামে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ এবং সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন ব্যক্তির পক্ষ থেকে আমরা মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করতে দেখেছি। এমন উস্কানিমূলক মন্তব্যে প্রভাবিত হয়েই ওই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেনের কথা থেকেই স্পষ্ট, 'কেউ না কেউ কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছে বিষয়টি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। যখন বিষয়টা ফেসবুকে এসেছে তখন অনেকে তার উপর বিক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা বলেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তাই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন।'

এছাড়া প্রক্টর জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'তার (মাহির) কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হওয়া মানে রাষ্ট্রের মানহানি হওয়া। ওই ছেলের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে। সে অনলাইন ক্লাস বর্জনের আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছে।'

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আমরা শাবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি, মাহিরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও মামলা দায়ের স্বাধীন ও মুক্ত ক্যাম্পাস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চেতনার বিরোধী। আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মামলা করতে পারে, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে জানমালের কেউ ক্ষতি সাধন করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তাকর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে মামলা করতে পারেন। কিন্তু মাহির চৌধুরীর ফেসবুক পোস্টে এমন কোনো আলামত ছিল না যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো জানমালের ক্ষতি হতে পারে।

এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে আইনের (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) বলে মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে, বিগত কয়েকবছর যাবত বাংলাদেশের প্রায় সকল মহল থেকেই সেই আইন বাতিল করার দাবি জানানো হচ্ছে। তদুপরি বিভিন্ন গ্রুপের উস্কানির বিরুদ্ধে যেখানে প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীর নাগরিক অধিকারের পক্ষে লড়াই করা, সেখানে উল্টো এই মামলা দায়ের করে শাবিপ্রবি প্রশাসন এক কলঙ্কজনক নজির স্থাপন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হওয়া এবং চলমান শিক্ষার্থীর চলাচল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়াতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি আমরা শাবিপ্রবি'র প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ নিম্নোক্ত দাবি জানাচ্ছি-

১) অবিলম্বে মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। 

২) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

৩) ক্যাম্পাসের যেকোনো ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যাবতীয় হুমকি-ধমকি থেকে হেফাজত নিশ্চিত করতে হবে। অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বা সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের ইচ্ছাকে চরিতার্থ না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাবস্থায় অভিভাবকসুলভ, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।

৪) ক্যাম্পাসে সর্বাত্মক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

 

এইচএন/আরআর-০৪