করোনাভাইরাস বাতাসেও ছড়ায়

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুলাই ০৮, ২০২০
০৩:৩৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৮, ২০২০
০৩:৩৪ অপরাহ্ন



করোনাভাইরাস বাতাসেও ছড়ায়

বিশ্বে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা; পানশালা, রেস্তোরাঁ, অফিস, বিপণি কেন্দ্র, ক্যাসিনোগুলোতে এ ভাইরাস খুঁজে নিচ্ছে শিকার, বাড়িয়ে তুলছে গুচ্ছ সংক্রমণের শঙ্কা। আর তাতে সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে, যা গত কয়েক মাস ধরে বিজ্ঞানীরা বলে আসছিলেন: বদ্ধ ঘরের বাতাসে টিকে থাকে এ ভাইরাস, আশপাশে যাকে পায়, সংক্রমিত করে।

এ ভাইরাস যদি সত্যিই বাতাসে বাহিত হয়ে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ছড়াতে পারে, বিশেষ করে সেসব জায়গায়, যেখানে অবাধে বাতাস চলাচল নেই, কিন্তু মানুষের সমাগম বেশি, তাহলে ভাইরাস ঠেকানোর পরিকল্পনাতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।

সেক্ষেত্রে মাস্ক পরতে হবে ঘরের মধ্যেও। সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মানার পরও আবদ্ধ জায়গায় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দিতে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের এন ৯৫ মাস্ক পরে নিতে হবে। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নার্সিং হোম, বাসাবাড়ি আর অফিসে এয়ার কন্ডিশনার বা এয়ার কুলারের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে, বসাতে হবে বাতাস বিশুদ্ধ করার শক্তিশালী ফিল্টার। এমনকি ঘরের ভেতরে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ভাইরাসবাহী অতিক্ষদ্র কণাগুলো ধ্বংস করতে অতিবেগুনী রশ্মিও ব্যবহার করতে হতে পারে।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বরাবরই বলে আসছে, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশির সময় শ্বাসতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা ভাইরাল জলকণা থেকেই মূলত এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে। তবে অপেক্ষাকৃত বড় কণাগুলো ভারী হওয়ায় দ্রুত নিচে পড়ে যায়।

কিন্তু ৩২টি দেশের ২৩৯ জন বিজ্ঞানী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে লেখা এক খোলা চিঠিতে প্রমাণসহ দেখিয়েছেন, বাতাসে ভেসে থাকা একেবারে ক্ষুদ্র ভাইরাসবাহী কণা থেকেও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তাদের তথ্য-পরামর্শে হালনাগাদ করার সুপারিশ করেছেন এই বিজ্ঞানীরা। সোমবার তাদের ওই চিঠি ক্লিনিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালেও প্রকাশ করা হয়েছে।

গত ২৯ জুন প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যেও বলা হয়েছে, কেবল তখনই এ ভাইরাস বাতাস বাহিত হয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে যদি ভাইরাল জলকণা বা ড্রপলেটের আকার ৫ মাইক্রনের চেয়ে ছোট হয় (১ মাইক্রন = ১ মিটারের ১ মিলিয়নতম ভাগ)। 

আর কেবল তখনই আবদ্ধ পরিবেশে বায়ু চলাচলের সুবিধা বা এন ৯৫ মাস্ক পরার কথা ভাবা উচিৎ বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

মহামারীর শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তাদের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনায় প্রাথমিক সুরক্ষাবিধি হিসেবে ঘন ঘন হাত ধোয়ার কথা জোরেশোরে বলে আসছে।

অথচ কোনো বস্তুর উপরিতল থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার প্রমাণ খুব বেশি নেই। (যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এখন বলছে, কোনো কিছুর উপরিতল এই ভাইরাস ছড়াতে সামান্য ভূমিকাই রাখে।) 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বেনেদেত্তা আলেগ্রানজির দাবি, এই ভাইরাস যে বাতাস বাহিত হয়ে ছড়াচ্ছে, তার গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই। গত কয়েক মাস ধরে বার বার বলা হচ্ছে, বাতাসে বাহিত হয়েও এ ভাইরাস থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে, তবে এর কোনো পোক্ত বা সুস্পষ্ট প্রমাণ এখনও নেই। এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, অন্তত ২০ জন বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার তারা নিয়েছে, যাদের মধ্যে এক ডজন গবেষক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক, কেউ কেউ আবার এই সংস্থার গাইড লাইন তৈরির সঙ্গেও যুক্ত, তারা কেউ এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থানের সঙ্গে একমত নন।  

এই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁচি বা কাশির সময় বাতাসে ছড়ানো বড় আকারের ভাইরাল কণাই হোক, অথবা ঘরের শেষ মাথা পর্যন্ত ভেসে যেতে পারে- এমন ছোট আকারের কণা, দুইভাবেই বাতাসে ভাসমান করোনাভাইরাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে পৌঁছে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

সিডনিতে ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের এপেডেমিওলজিস্ট ম্যারি-লুইস ম্যাকলস বলেন, বাতাসের প্রবাহ আর ভাইরাল কণার আকার নিয়ে এই বিতর্কে আমি হতাশ। যদি আমরা প্রবাহমান বাতাসের প্রভাবের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে যাই, তাহলেই হয়ত আমাদের এতদিনের অনেক সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতে হবে।

বিএ-০৪