মাস্ক পিপিইতেও সাহেদের প্রতারণা

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুলাই ১৯, ২০২০
০১:০৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৯, ২০২০
০৩:১৩ অপরাহ্ন



মাস্ক পিপিইতেও সাহেদের প্রতারণা

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসার পাশাপাশি নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করেও প্রতারণা করেছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

পরীক্ষা না করে করোনাভাইরাসের ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়া এবং বিনামূল্যে আক্রান্তদের চিকিৎসার বদলে তাদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন ১০ দিনের রিমান্ডে আছেন সাহেদ।

রিমান্ডের তৃতীয় দিন শনিবার গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের বলেন, সাহেদের বিরুদ্ধে করোনা চিকিৎসায় সরবরাহকৃত সুরক্ষা সামগ্রী নিয়েও প্রতারণার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সাহেদ ফেইসবুকে ভুয়া কোম্পানির নামে পেইজ খুলে প্রতারণা করতেন। ফেইসবুকে আলবার্ট গ্লোবাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি নামের পেইজ খুলে এই করোনাকালীন সময়ে পিপিই, মাস্ক ও ডেড বডি ক্যারিয়ার ব্যাগ সাপ্লাই দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য খাতে সাহেদ প্রায় ৫০ হাজার পিপিই, এক লাখ মাস্ক এবং ২০ হাজার মৃতদেহ বহনের ব্যাগ সরবরাহ করেছেন জানিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রকৃতপক্ষে আলবার্ট গ্লোবাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি নামের কোনো কারখানার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সাহেদ সাব-কনট্রাক্টে ছোট গার্মেন্ট থেকে নিম্নমানের কাপড় দিয়ে এসব সুরক্ষা সামগ্রী তৈরি করিয়েছিল। আমরা ধারণা করছি, তার (সাহেদ) সাপ্লাই দেওয়া নিম্নমানের এই সব সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে প্রথম দিকে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিতরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের কাছে এসব পিপিই, মাস্ক কীভাবে পৌঁছাল সেই প্রশ্নের উত্তর আব্দুল বাতেনের বক্তব্যে পাওয়া যায়নি।

পরে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার কাজী শফিকুল আলম বলেন, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে পিপিই কিনে হাসপাতালে হাসপাতালে বিতরণ করেছে। আলবার্ট কোম্পানিও সেগুলোর একটি, তারাও পিপিই দিয়েছিল। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, এই কোম্পানির নামে সাহেদের বিতরণ করা পিপিই সামগ্রী নিম্নমানের ছিল।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘অধিক হারে’ আক্রান্ত হওয়ার পেছনে নিম্নমানের পিপিই, মাস্কের ভূমিকা রয়েছে বলে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলোতে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ নিয়ে এর আগেও আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

মাস্ক ও পিপিইসহ নিম্নমানের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহের ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে এরইমধ্যে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড ও তমা কনস্ট্রাকশনসহ কয়েকটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

ওই সব কোম্পানির তালিকায় এবার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদের ভুয়া কোম্পানি আলবার্টের নাম এলো। তবে এ বিষয়ে এখনও কেন্দ্রীয় ঔষধাগার কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চার মাস আগে বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালকে ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতালে হিসেবে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি দেয় সরকার।

কিন্তু করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, নিয়ম বহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর র‌্যাব গত ৬ থেকে ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয়।

র‌্যাবের ওই অভিযানের পর রিজেন্টের মালিক সাহেদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবরও সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক পরিচয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কীভাবে তিনি নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন, সেসব তথ্যও এখন গণমাধ্যমে আসছে।

রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর ৭ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণার অভিযোগে সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র‌্যাব। সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়।

এরপর গত বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাকে মামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। র‌্যাবের ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার সাহেদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, সাহেদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য সেক্টরেও প্রতারণার তথ্য তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে। এসব বিষয়ে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাহেদের প্রতারণা সংশ্লিষ্ট যেসব অনিয়ম আমরা পেয়েছি, তা আইন অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে জানাব।

বিএ-২২