বিশ্বনাথ প্রতিনিধি
জুলাই ২০, ২০২০
০৬:২৮ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ২০, ২০২০
০৬:২৮ অপরাহ্ন
সিলেটের বিশ্বনাথে বাবার বাসা থেকে কোহিনুর আক্তার আশা (২১) নামের এক নববধূ ১২দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৯ জুলাই সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ হন। সোমবার (২১ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তার কোনে সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ কোহিনুর আক্তার আশা বিশ্বনাথ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী রমজান মিয়ার মেয়ে। তাকে উদ্ধার করতে নিখোঁজের পরিবারের কাছে উপজেলা সমবায় অফিসের সাবেক কর্মচারী (এমএলএস) রুজিনা আক্তার কর্তৃক টাকা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকে রুজিনা আক্তারের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করছেন নিখোঁজ কোহিনুরের পরিবার। কোহিনুরের কোন সন্ধান না পাওয়ায় পরদিন ১০ জুলাই বিশ্বনাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন রমজান আলী। ডায়েরি নম্বর ৩৪০।
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার পানিশ্বর গ্রামের রমজান মিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বনাথ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত আছেন। চাকরি সূত্রে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তিনি উপজেলা সদরের জানাইয়া রোডস্থ তেরাবুন ভিলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। প্রায় ৫বছর আগে আত্মীয় উমান প্রবাসী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে তার বড় মেয়ে কোহিনুর আক্তার আশার বিয়ের ঠিক করা (এনগেজমেন্ট) হয়। গত ৫ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নিজ বাড়িতে কোহিনুর আক্তার আশা ও আলমগীর হোসেনের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর স্বামী আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ১৯ জুন বিশ্বনাথে পিতার বাসায় আসেন কোহিনুর। এরপর গত ৯ জুলাই সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করে বাসা থেকে নিখোঁজ হন। তখন বাসার আশপাশ ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ী ছাড়াও বিভিন্ন স্থানের খোঁজাখুজি করে মেয়ে কোহিনুরের কোন সন্ধান না পাওয়ায় পরদিন ১০ জুলাই বিশ্বনাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন রমজান আলী।
কোহিনুর আক্তার আশার পিতা রমজান আলী ও মা সুচনা আক্তার রুবীর অভিযোগ, তাদের এলাকার মেয়ে রুজিনা আক্তার বিশ্বনাথ উপজেলা সমবায় অফিসে এমএলএস পদে কর্মরত থাকায় তার সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। রুজিনা বর্তমানে ছাতক উপজেলায় কর্মরত থাকলেও তিনি বিশ্বনাথে বসবাস করে আসছেন। কোহিনুর নিখোঁজের একদিন পর ১১ জুলাই সকালে তাদের বাসায় আসেন রুজিনা। এসময় কোহিনুর বিশ্বনাথেই রয়েছে এমনটাই তার পরিবারকে বলেন রুজিনা। তাই কোহিনুরকে উদ্ধারের জন্য রুজিনা সিলেটে তার পরিচিত জয় নামের একজনের সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দেন এবং তার এই পরামর্শেই কোহিনুরের পিতা-মামা রোজিনার সঙ্গে সিলেট শহরে গিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে জয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তখন কোহিনুরকে উদ্ধার করতে খরচপাতির কথা বলে কোহিনুরের পরিবারের কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা নেন রুজিনা। কথা ছিলো তিন দিনের মধ্যে কোহিনুরকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার। কিন্তু তিনদিন পর কোহিনুরের পরিবারকে রুজিনা জানান জয় এক মাসের জন্য কোথাও চলে গেছেন তাই তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। তাই কোহিনুরকে উদ্ধার করতে হলে র্যাবের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ৫ লাখ টাকা। এক পর্যায়ে কোহিনুরের পরিবারকে আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন রুজিনা। কিন্তু এতে অপারগতা প্রকাশ করেন কোহিনুরের পরিবার। তাদের ধারণা কোহিনুর নিখোঁজ হওয়ার পিছনে রুজিনার হাত রয়েছে।
এছাড়া কোহিনুরের পিতা রমজান আলী আরও অভিযোগ করেন, গত ৪ জুন কোহিনুরের গায়ে হলুদের দিন একটি অজ্ঞাতনামা মোবাইল নাম্বার থেকে একাধিকবার কল আসে রমজান আলীর মোবাইলে। তখন অজ্ঞাতনামা একজন কোহিনুরকে বিয়ে না দেওয়ার কথা বলে হুমকি দেয়। কোহিনুর নিখোঁজের পর থেকেও একাধিক নাম্বার থেকে অজ্ঞাতনামা লোক ফোন ও ম্যাসেজ দিয়ে আসছে। মেয়েকে উদ্ধারের জন্য তারা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
এবিষয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা সমবায় অফিসের সাবেক কর্মচারী (এমএলএস) রুজিনা আক্তারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, আমরা নিখোঁজ মেয়েটির সন্ধান পেতে এবং তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এমএএস/বিএ-০১