নদীতে ভাসছে পশুর চামড়া

সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার


আগস্ট ০৪, ২০২০
১২:০৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৪, ২০২০
১২:০৩ পূর্বাহ্ন



নদীতে ভাসছে পশুর চামড়া

কোরবানির ঈদে পশুর চামড়ার ক্রেতা না পেয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন মৌলভীবাজারের জুড়ির কোরবানিদাতারা। এতে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। 

গতকাল রবিবার (২ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিন মৌলভীবাজারের জুড়ী নদীতে গিয়ে চামড়া ভাসতে দেখা গেছে। কেউ উন্মুক্ত করে ফেলে রেখেছে, কেউ আবার বস্তাবন্দি করে ফেলেছেন। স্থানীয়রা বলছেন কেই চামড়া কিনতে না আসায় তারা এমনটা করেছেন। 

কথা হয় বেলাগাঁও এলাকার বাসিন্দা হাবিব চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা দুইদিন অপেক্ষা করেছি, কেউ চামড়া নিতে আসেনি। ধীরে ধীরে চামড়া থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানি থাকায় মাটিতে পোঁতা সম্ভব হয়নি। তাই সেজন্য নদীতে ফেলে দিয়েছি।’ 

চামড়া নদীতে ফেলায় একদিকে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন নদী দূষিত হচ্ছে। জুড়ী নদীর পানি হাকালুকি হাওরেও যায়। সেজন্য হাকালুকির পানি দূষণেরও আশঙ্কা রয়েছে। এতে নষ্ট হতে পারে হাওরের জীববৈচিত্র।

এই এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদ বলেন, ‘নদীতে ফেলে দেওয়ার কারনে নদী দূষিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের যে অন্য কোনো উপায় নেই। প্রশাসন থেকেও বর্জ্য আপসরণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’ 

পাতিলাসাঙ্গন এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছরই আমাদের এলাকায় চামড়া কিনতে কেউ না কেউ আসতেন। কিন্তু এবার কেউ আসেননি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলেছি।’ তিনি বলেন, ‘এই এলাকার অনেক মানুষই এমন করেছেন।’ 

জুড়ী শহরের স্থয়ী বাসিন্দা মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, ‘প্রতি বছর দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অর্থ যোগাতে বিভিন্ন এতিমখানা, মাদরাসা ও সংগঠন চামড়া সংগ্রহ করে নিয়ে যেত। এবার কেউ নেয়নি। কোনো ক্রেতাও আসেনি। তাই আমাদের কোরবানির পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছি।’ 

জুড়ীর ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী শিমুল আহমদ বলেন, ‘এবার আমি ৩৪টি বড় গরুর চামড়া কিনে মাত্র ৫ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি। আগে যেখানে প্রতিটি বড় গরুর চামড়া ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করা যেত, সেই একই চামড়া এখন ১০০/১৬০ টাকাযর বেশি দামে বিক্রি করা যায় না। এরকম চলতে থাকলে আমরা আগামী ঈদে আর চামড়া কিনব না।’

উপজেলার স্থানীয় সংগঠক আশরাফুজ্জামান রিশাদ  বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়ার দাম না পেয়ে ক্ষোভে চামড়া ব্যবসায়ীবৃন্দ ও বিক্রেতারা পশুর চামড়া জুড়ী নদীতে ফেলে দিয়েছেন। যা জুড়ী নদী ও হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র‍্য নষ্ট এবং মাছের জন্য হুমকি। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে চামড়া শিল্পের কদর রয়েছে এবং চামড়া শিল্প থেকে বিদেশি আয়ের সুযোগ রয়েছে। উপযুক্ত দাম না পেয়ে যদি চামড়া ব্যবসায়ীরা এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন একদিকে যেমন চামড়া শিল্পের বাজারে ধ্বস নামবে অন্যদিকে নদী, হাওর জলাশয়ে চামড়া ফেলে জীববৈচিত্র‍্য নষ্ট এবং পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলাম  বলেন, ‘নদীতে কেউ চামড়া ফেলে দিলেতো আমরা তাদের আটকাতে পারব না। তাদেরকে বলা হয়েছে কেউ চামড়া বিক্রি করতে না পারলে সেটা স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মাধ্যমে আমরা ক্রয় করব। সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে চামড়া সঠিক স্থানে প্রেরণ করে উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করা হবে বলেও জানানো হয়েছিল।‘

এনপি-০৬