পর্যটকদের ভিড়ে মুখর হাকালুকি

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


আগস্ট ০৪, ২০২০
১০:৩৬ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৪, ২০২০
১০:৩৬ অপরাহ্ন



পর্যটকদের ভিড়ে মুখর হাকালুকি

উপরে নীল আকাশ আর নিচে অথৈ স্বচ্ছ জলরাশি। হাওরের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে হিজল-করচসহ নানান জলজ বৃক্ষ। হাওরের জলে বয়ে চলেছে ছোট-বড় নৌকা। আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। নয়নাভিরাম এ দৃশ্যটি এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মন কাড়ে পর্যটকদের। তাই তো সেখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা।

এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা অংশের হাকালুকি হাওর। ছুটিতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা সেখানে ভিড় জমিয়েছেন। এতে আয়-রোজগার বেশি হওয়ায় স্থানীয় নৌকাচালকদের মুখেও হাসি ফুটেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বন বিভাগের হাকালুকি বিট অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষা এলেই হাকালুকি হাওরে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। তবে এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে। কিন্তু ভ্রমণপিপাসু মানুষ করোনার ভয় উপেক্ষা করে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসছিলেন হাকালুকি হাওরে। ঈদের দিন শনিবার থেকে ঈদের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখানে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাকালুকি হাওর ঘুরতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন নানা বয়সী মানুষ। কেউ পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন, কেউ বা এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। হাওরপাড়ের হাল্লা গ্রামে যেতেই দেখা গেল সড়কের উপর সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে অনেকগুলো গাড়ি। বর্ষায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন ও পানি উঠায় অনেকেই আশপাশের বিভিন্ন বাড়িতে গাড়ি রেখেছেন। সড়কের পাশ ঘেঁষে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে ছোট-বড় নৌকা। মানুষজন দর কষাকষি করে সেসব নৌকায় উঠে হাওরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পাখিবাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন জাতের পাখিদের ওড়াওড়ি দেখছেন। হাওরের বুকে চলছে ছোট-বড় নৌকা। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াচ টাওয়ার আর বন বিভাগের বিট অফিসের উপরে দাঁড়িয়ে হাওরের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য অবোকলন করছেন পর্যটকরা। ঘুরতে আসা পর্যটকদের কেউ কেউ ওয়াচ টাওয়ার থেকে হাওরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, সাঁতার কাটছেন। ওয়াচ টাওয়ারে দায়িত্বরত লোকজন তাদেরকে সতর্ক করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। সন্ধ্যা অবধি সেখানে মানুষের আনাগোনা ছিল।

হাওরে ঘুরতে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহি আবিদ বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন থেকে ঘরবন্দি ছিলাম। অনেকদিন ঘোরাঘুরি হয়নি। প্রকৃতির কাছকাছি যাওয়া হয়নি। ভেতরে একরকম অস্বস্তি কাজ করছিল। তাই ভাবলাম বন্ধুদের সঙ্গে হাওর থেকে ঘুরে আসি। এখানে এসে ভালো সময় কেটেছে। মনটা সতেজ লাগছে। এখানে সূর্যাস্ত দেখতে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।'

চাকরিজীবী শাহ লুৎফুর রহমান বলেন, 'বর্ষায় হাওরের সৌন্দর্য দেখতে অন্যরকম ভালো লাগে। এখানকার পরিবেশ আমাকে বার বার টানে। তাই প্রাণের টানে এখানে ছুটে এসেছি। অসম্ভব ভালো লাগছে। আসার সময় সড়কপথে কষ্ট হয়েছে। তবে হাওরের রূপ দেখে তা ভুলে গেছি।'

শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, 'বর্ষাকালে হাওর দেখতে অনেকটা মিনি কক্সবাজারের মতো লাগে। আর এখানে কী নেই? নির্মল বাতাস রয়েছে। হিজল-করচ গাছ রয়েছে। পাখিবাড়ি রয়েছে। এগুলো হাওরের সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে ঘুরতে এসে অন্যরকম ভালো লাগছে।'

স্থানীয় এক নৌকাচালক বলেন, 'আমরা বর্ষাকালের জন্য অপেক্ষায় থাকি। এ সময় মানুষজন হাওরে ঘুরতে আসেন। তখন আমাদের বাড়তি আয়-রোজগার হয়। এই সময়ে প্রতিদিন নৌকা চালিয়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয়-রোজগার করা যায়।'

বন বিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা (জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট) তপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, 'ঈদ উপলক্ষে হাওরে প্রতিদিন ৫ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটছে। এখানে জনবল সংকট আছে। আমি একা মানুষজনের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি আরও কয়েকজন লোক এখানে দিতেন তাহলে ভালো হতো।'

 

এজে/আরআর-১০