উৎকণ্ঠার অবসান, বোমাসদৃশ্য বস্তুটি গ্রাইন্ডিং মেশিন

সিলেট মিরর ডেস্ক


আগস্ট ০৬, ২০২০
১১:১৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৬, ২০২০
১১:২২ পূর্বাহ্ন



উৎকণ্ঠার অবসান, বোমাসদৃশ্য বস্তুটি গ্রাইন্ডিং মেশিন

বোমা নিষ্ক্রিয়করণ অভিযান শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ১৭তম পদাতিক ডিভিশনের বোমা বিশেষজ্ঞ লেফটেনেন্ট কর্ণেল রাহাত। ছবি- এইচ এম শহীদুল ইসলাম

অবসান হল দীর্ঘ উৎকণ্ঠার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭তম পদাতিক ডিভিশনের বোমা বিশেষজ্ঞদের অভিযানের পর জানা গেল বোমা সাদৃশ্য বস্তুটি আসলে একটি ‘গ্রাইন্ডিং মেশিন। আর এটি নিষ্ক্রিয় করার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো দীর্ঘ প্রায় ২২ ঘন্টার উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার।

বোমাসদৃশ্য বস্তুটি পাওয়ার প্রায় ২০ ঘন্টা পর আজ বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) বেলা ২টার দিকে সেটি নিষ্ক্রিয় করতে সিলেট নগরের চৌহাট্টস্থ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ও ধ্বংসকরণ টিম। নিজস্ব প্রক্রিয়ায় প্রায় দুই ঘন্টা অপারেশনের পর তারা নিশ্চিত হন এটি কোনো ধরণের বোমা নয় একটি গাইন্ডিং মেশিন।

এর আগে গতকাল বুধবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় নগরের চৌহাট্টা পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পূর্বের পুলিশ বক্সের পাশে রাখা একটি পালসার মোটরসাইকেলে  (ঢাকা মেট্রো ১৪-৯২৭০) বোমাসদৃশ্য বস্তু দেখতে পাওয়া যায়। এরপর থেকেই নগর জুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। প্রথমে পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের (সিআরটি) সদস্যরা এবং পরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। তবে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে রাতে কোনো পদক্ষেপ নেননি তারা। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী বিশেষজ্ঞ টিম এসে এটি নিষ্ক্রিয় করবে । এরপর থেকেই পার হচ্ছিল উৎকণ্ঠার সময়।

বোমাসদৃশ্য বস্তুটি পরীক্ষা শেষে নিয়ে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা। ছবি- এইচ এম শহীদুল ইসলাম।

 

এদিকে বোমাসদৃশ্য বস্তু পাওয়ার খবর জানাজানি হলে চৌহাট্টা এলাকা জুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয় আতঙ্ক। ফার্মেসী ছাড়া আশপাশের দোকান বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা৷ ঘটনাস্থলে অনেক উৎসুক জনতার ভিড় জমাতে থাকেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সরে যাওয়ার জন্য বার বার আহ্বান জানান। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জায়গাটিকে ক্রাইম সিনের ফিতা টেনে ঘিরে রাখেন।

বোমাসদৃশ্য বস্তুটি নিষ্ক্রিয় করার পর আজ বিকেল ৪টার দিকে সংবাদমাধ্যমের সামনে পুরো বিষয় তুলে ধরেন সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের বোমা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ লে. কর্ণেল রাহাত। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, গতকাল সন্ধ্যার সময় একজন পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেলে একটি অবজেক্ট, একটা সাসপেক্ট (সন্দেহজনক বস্তু) পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এই অবজেক্টটা ইন্সপেকশন ও পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা পেয়ে সিলেটে থাকা ১৭ পদাতিক ডিভিশনের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ও বোমা ধ্বংসকরণ টিম আমরা এখানে আসি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে এসে আমাদের পদ্ধতি অবলম্বন করেছি, পরিদর্শন করেছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা একটা গাইন্ডিং মেশিন। কিন্তু অধিকতর তদন্তের জন্য এবং এখানে যাতে অন্য ধরনের সন্দেহজনক বস্তু না থাকে, এটা নিশ্চিত করতে আমাদের নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করেছি এবং আরো নিশ্চিত হতে আমরা এটাকে খুলেছি।’ এসময় লে. কর্ণেল রাহাত আরও বলেন, ‘হতে পারে ভুলবশত, অথবা হতে পারে কেউ এটা পুলিশ সদস্যের গাড়িতে রেখে একটা আতঙ্ক ছড়াতে চেয়েছিল।’

কারা এটি ঘটিয়েছে সেটি শনাক্ত করা সম্ভব কিনা এ প্রশ্নের জবাবে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘আমরা দুই দিক থেকে চিন্তা করতে পারি। কেউ ভুলবশত গাইন্ডিং মেশিনটা এখানে রেখে যেতে পারেন। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি, সরকারি গাড়ি, সেজন্য আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বা জনমনে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির জন্য হয়তো কেউ রেখে থাকতে পারেন।’ এ নিয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।

 

এএফ/০৫