সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২০
০১:০৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২০
০১:০৭ পূর্বাহ্ন
মো. জিল্লুর রহমান
চিকিৎসকদের মতে, মহামারি করোনায় আক্রান্ত হলে রোগীকে মানসিক শক্তি জোগানো প্রয়োজন। রোগীর মন যাতে ভালো থাকে, সেই আহ্বান বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্যে জানিয়েছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ায় মানসিকভাবে বিষন্ন থাকার পরও বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে। সরকারি নিয়মে বদলির আদেশ এই কর্মকর্তা মেনে নিলেও এ অমানবিক কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার শিক্ষক মহলসহ সুধীজন।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমানকে গতবছরের ৫ মার্চ জাতীয় শিক্ষা একাডেমী থেকে সুনামগঞ্জে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি নজরুল সঙ্গীত গবেষক ও নজরুল সঙ্গীত শিল্পী। সংস্কৃতিমনা এই শিক্ষা কর্মকর্তার সততা ও নিষ্ঠার কথা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগও বিশেষভাবে অবগত। হাওরের প্রাথমিক শিক্ষায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় সংস্কৃতিমনা এই কর্মকর্তা নিজের দপ্তরসহ সকল মহলে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন।
জানা গেছে, গত ১৫ আগস্ট তাঁর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তিনি নমুনা প্রদান করেন। ১৭ আগস্ট পাওয়া রিপোর্টে তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেন। কিন্তু ২০ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আক্তারুন নাহারের স্বাক্ষর করা বদলির চিঠি পান তিনি। তাঁকে রাজধানীর প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান রাজধানীর লেচুবাগানের নিজ বাসভবনে আইসোলেশনে রয়েছেন। এখনও তিনি করোনা পজিটিভ এবং তাঁর শরীরে জ্বর আছে বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন, 'আমাদের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সততা ও সাংস্কৃতিক গুনের জন্য সবার কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য। তাঁর করোনা হওয়ায় শিক্ষকরা মর্মাহত হন। কিন্তু করোনার মধ্যে বদলির আদেশের খবর শিক্ষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।'
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান আজ রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এই প্রতিবেদককে বলেন, 'উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেখানে আমাকে বদলি করেছেন, সুস্থ হয়ে আমি সেখানেই যোগদান করব। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেটি ভাল মনে করেছেন, সেটিই করেছেন। কর্তৃপক্ষের আদেশ অনুযায়ী সুস্থ হলেই নতুন কর্মস্থলে যোগদান করব।'
সুনামগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. শামছুদ্দিন আহমদ বলেন, 'করোনায় আক্রান্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হলে তিনি সুস্থ হওয়ার আগে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারবেন না।'
এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, 'আমাকে এ বিষয়টি কয়েকজন শিক্ষক প্রতিনিধি ও সুধীজন অবগত করেছেন। ঘটনাটি শোনার পর আমার খারাপ লেগেছে। তবে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা যদি বদলি হতে না চান, তাহলে আমি মন্ত্রণালয়কে বলে তাকে রাখার ব্যবস্থা করব।'
এসএস/আরআর-০৬