বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
১১:২০ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
১১:২০ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জে করোনা চলাকালীন সময়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্বপালন করতে গিয়ে দুই উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনাকালে পরিষদের নিয়মিত দায়িত্বপালনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক বন্যায় জনহিতকর কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হন বলে জানা গেছে। তবে করোনাকে জয় করে সম্প্রতি ফের জনসেবায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন এই জনপ্রতিনিধিরা।
মহামারি করোনায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো চেয়ারম্যানরাও মাঠে থেকে প্রতিনিয়ত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। জনপ্রতিনিধিত্বহীন বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত জনপ্রতিনিধির ছোট্ট একটি অংশ বাদ দিলে অধিকাংশ চেয়ারম্যান করোনা দুর্যোগে গৃহবন্দি না থেকে জনসেবায় নিজেদের উপস্থিতির জানান দিয়েছেন। তারাও নিঃসন্দেহে করোনাকালের অন্যতম সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত। তাদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনের দেহে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তারা সুস্থ হয়ে ফের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। আবার অনেকের মাঝে করোনার লক্ষণ দেখা দিলে তারা নিজে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়াদের মধ্যে আছেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন (সপরিবারে), তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল (সস্ত্রীক), দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাথারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনূর রশিদ, ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. অদুদ আলম, একই উপজেলার খুরমা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ ও একই উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল হক।
করোনাক্রান্ত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর থেকে সরকারি-বেসরকারি দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের উপরও বাড়তি দায়িত্ব এসে বর্তায়। করোনাকালীন সঙ্কটে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। করোনাসহ সাম্প্রতিক তিন দফা বন্যায় সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণ ও অর্থ সহায়তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নিজস্ব কার্যালয় ছাড়াও অনেক জনপ্রতিনিধিকে বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত যেতে হয়েছে। আর এভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে গিয়ে তারা করোনা ভাইরাসের জীবাণু বহন করে নিয়ে এসেছেন। এভাবে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান সংক্রমিত হয়েছেন এবং পরবর্তীতে আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়ে ফের জনসেবায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন। জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়া কেউ কেউ প্রশ্ন রেখে বলেছেন, 'সরকার কি আমাদের দিকে নজর দেবে?'
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল হক জানিয়েছেন, তিনি গত ঈদুল আজহার পরের দিন করোনায় আক্রান্ত হন। পরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সিলেটের একটি হাসপাতালে প্রায় ১০ দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে যান। করোনামুক্ত হলেও দুর্বলতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি এই জনপ্রতিনিধি। মূলত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
করোনা সংক্রমিত ছাতক উপজেলার খুরমা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ বলেন, 'গতমাসে আমি করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। বর্তমানে সুস্থ আছি। গত ৩টি বন্যায় ত্রাণ দিতে মানুষের ঘরে ঘরে যেতে হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এমনিতেই সবসময় জনগণের সংস্পর্শে থাকতে হয়। আর করোনাভাইরাসটি যেহেতু একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে প্রবেশ করে, সেহেতু জনগণের কাতারে থাকতে গিয়েই সম্ভবত সংক্রমিত হয়েছি। আমরা যারা জনগণের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছি, সরকার কি তাদের প্রতি নজর দেবে?'
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, 'একজন জনপ্রতিনিধিকে নিয়মিতই জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যেতে হয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে গিয়েই হয়তো আমি করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। সংক্রমিত থাকাবস্থায় প্রায় মাসখানেক গৃহবন্দি ছিলাম। বর্তমান সুস্থ আছি এবং আগের মতো পরিষদের কাজে ফিরে এসেছি।'
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাথারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনূর রশিদ জানিয়েছেন, গতমাসে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে সিলেটের একটি হাসপাতালে ১৪ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন পরিষদের কাজে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন।
সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সফর উদ্দিন বলেন, 'পরিষদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। তখন ২১ দিন হোম আইসোলেশনে ছিলাম। এখন আল্লাহর রহমতে সবাই সুস্থ আছি এবং পরিষদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছি।'
সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, 'করোনা আসার পর সকাল থেকে রাত অবধি মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। করোনায় আক্রান্তদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে হাওরে কৃষকদের সঙ্গে ধান কাটায় অংশগ্রহণ করেছি। সর্বশেষ গত ১৯ জুন লাউড়েরগড়ে শাহ আরেফিন রাস্তার কাজ উদ্বোধন করে এসে পরের দিন করোনায় আক্রান্ত হই। আমি ১৭ জুলাই করোনামুক্ত হয়ে বর্তমানে জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি।'
উল্লেখ্য, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল চলতি বছরের ৮ মার্চ। গতবছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম ধরা পড়ে করোনা আক্রান্ত রোগী। পরে চীনের অন্যান্য প্রদেশ এবং বিশ্বের নানা দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে, যার মারাত্মক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে।
বিআর/আরআর-০৩