ডেমোক্রেট সমর্থকদের তাড়া করছে হিলারি ও আল গোর অধ্যায়

ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন, নিউইয়র্ক থেকে


নভেম্বর ০৫, ২০২০
০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০৫, ২০২০
০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন



ডেমোক্রেট সমর্থকদের তাড়া করছে হিলারি ও আল গোর অধ্যায়

জনমত জরিপে প্রচারণার শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। শেষ মুহূর্তেও সুইং স্টেটগুলোর অধিকাংশ এলাকায় এগিয়ে থেকেছেন। মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর ) ডেমোক্রেট দলের ভোটাররা ব্যাপকভাবে ভোট দিয়েছেন জো বাইডেনকে। যতোটা পছন্দের প্রার্থী  বাইডেন, তারচেয়েও বেশি কাজ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসন নিয়ে চরম অসন্তোষ। মঙ্গলবারে বাইডেন সমর্থকরা ভোট দিয়েছেন কিন্তু তাদের তাড়া করেছে নিকট অতীতের হিলারি ও আল গোর অধ্যায়।  

আমেরিকার সাম্প্রতিক ইতিহাসে ডেমোক্রেট দলের আল গোর এবং হিলারি বিপর্যয় ভুলে থাকতে পারেন না তারা। উভয় প্রার্থী জনপ্রিয় ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। ডেমোক্রেট দলে এখনও অনেকের বিশ্বাস আল গোরকে নির্বাচনে হারানো হয়েছে আদালতের কারসাজির মাধ্যমে। হিলারির মতো জাতীয়ভাবে জনপ্রিয় নাম বেশি ভোট পেয়েও ইলেকটোরেল ভোটের হেরে যাবেন , এনিয়ে ভাবতে গিয়ে এখনো হিমশিম খান দলের লোকজন।

সব সম্ভবের দেশ মনে করা হয় আমেরিকাকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও হয়তো কোনদিন মনে করেননি, আমেরিকার মতো দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবেন তিনি। আমেরিকার বেনিয়া গোস্টির যোগ্যতম সফল মানুষ ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে রাজনৈতিকভাবে উপস্থাপনই করেননি জাতীয় মঞ্চে। দ্রুতই ট্রাম্প ক্ষুব্ধ মানুষের ক্ষোভকে ধরতে পেরেছেন। উস্কে দিয়েছেন অজানা নানা ভীতিকে। আমেরিকার রক্ষণশীল লোকজনকে যেসব অজানা ভীতি তাড়া করছে তাদের প্রতিনিধি হয়ে উঠেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যারা ট্রাম্পকে তাদের অস্থিত্বের শেষ ত্রাতা হসেবে মনে করছে।

চেনা আমেরিকার ভাবমূর্তির সম্পুর্ন বাইরে গিয়ে এক সদা ক্ষুব্ধ মানুষ হিসেবে ট্রাম্প একের পর এক হামলা করেছেন নানাসব চিরচেনা ব্যবস্থাকে। ট্রাম্প সমর্থকরা এভাবেই তাঁকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। নির্বাচনের দিনেও দেখা গেছে ট্রাম্প সমর্থকরা এভাবেই ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছে। তাদের কাছে এ নির্বাচন করোনা সংক্রমণের জন্য মাস্ক পরা আর না পরার নির্বাচন নয়। ট্রাম্প সমর্থকদের কাছে ট্রাম্পের বিজয়ের সাথে তাদের সব গোপন ভীতির সম্পর্ক বিদ্যমান।  

সমর্থকদের মতে ট্রাম্প হেরে গেলে আমেরিকা আর আমেরিকা থাকবে না। অভিবাসী আর অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে যাবে। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হবে। আমেরিকার সব কর্মসংস্থান বাইরে চলে যাবে। জ্বালানী তেলের মূল্য বাড়বে। তাদের এসব ভয় ভীতির জন্য কোন তথ্য উপাত্ত বা যুক্তি নেই, নিছক বিশ্বাস নিয়ে তাঁরা দাঁড়িয়ে আছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে।  

আমেরিকার চার বছরের বিশৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য জন জোয়ার দেখা গেছে প্রচারণার শুরু থেকে। গুরুত্বের রাজ্য নিউজার্সি , ক্যালিফোর্নিয়া সহ আমেরিকার উন্নয়ন আর শ্রেষ্টত্বের জন্য যে জনমিশ্রনকে বাহবা দেয়া হয় , সেসব এলাকায় বেশীর ভাগ লোকজনের অবস্থান ভিন্ন । তাঁরা মনে করেন , যথেষ্ট হয়েছে। আর নয়। আমেরিকাকে আমেরিকা হিসেবেই তাঁরা দেখতে চান।

আমেরিকা একটি সহমর্মি দেশ । বিশ্বজুড়ে আনান অপকর্ম করে বেড়ালেও আমেরিকার লোকজন নিজেদের শ্রেষ্টত্বের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চায়। আমেরিকার চিরচেনা ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্যই লোকজন মরিয়া হয়ে জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন। তাদের কাছেও এবারের মার্কিন নির্বাচন মাস্ক পরা আর না পরার নির্বাচন নয়। এ নির্বাচনে জো বাইডেনকে জয়ী দেখার জন্যই তাঁরা ভোট দিয়েছেন। নানা আশংকা তারা করলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে টিভি'র সামনে সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে। একটাই প্রত্যাশা হিলারি বা আল গোরের পরিণতি যেন না হয় জো বাইডেনের !

 

এএফ/০৪