নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ২৪, ২০২০
০৮:১৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : নভেম্বর ২৪, ২০২০
০৮:১৯ পূর্বাহ্ন
সচিবরা এখন উপজেলা পরিষদের কর্তা হয়ে বসেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হারুন-অর-রশিদ হাওলাদার। অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের বদলে লেখা হয় উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা পরিষদের সচিব হিসেবে যাদের দায়িত্ব পালনের কথা, তারা আজ কর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আত্মসম্মানবোধ নিয়ে আজ উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন থেকে বঞ্চিত পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন বিচার বিভাগের শরণাপন্ন হতে চলেছে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের দাবি একটাই, বঙ্গবন্ধুর সংবিধান এবং শেখ হাসিনার প্রবর্তিত আইনে উপজেলা পরিষদ চালাতে হবে। অন্যথায়, সর্বোচ্চ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাংবিধানিক অধিকার আদায় করা হবে।’
সোমবার সকালে সিলেট জেলা পরিষদ হলরুমে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা ও অ্যাসোসিয়েশনের বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হারুন-আর-রশিদ হাওলাদার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে ২০০৯ সালে পুনঃপ্রবর্তন করেন। সেই আইনের ৪ এর ধারায় বলা আছে, সংবিধানের ৫৯ ও ১৫২ অনুচ্ছেদের নির্দেশনার আলোকে উপজেলা পরিষদকে একটি প্রশাসনিক একাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সেই সাংবিধানিক আইন অমান্য করছেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা আছে, প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে হবে শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু আজ চলছে জনপ্রতিনিধিবিহীন জনপ্রশাসন। কতিপয় কর্মকর্তার সংবিধান ও আইন বিরোধী মানসিকতার কারণে উপজেলা পরিষদসহ সকল জনপ্রতিনিধি মর্যাদা নিয়ে শাসন ব্যবস্থার দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এমন দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারত না।’
সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের সভাপতিত্বে ও ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান ও জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমদের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম খান বীরু।
প্রধান বক্তা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন জনপ্রতিনিধিও ছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণে অবিলম্বে জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন তিনি বাংলার মানুষের জন্য শাসনতন্ত্র দিতে চান। জনগণের ক্ষমতা, জবাবদিহি শাসন ব্যবস্থা, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় নিজের জীবন দিয়ে গেছেন জাতির পিতা। কিন্তু আজও সেই জবাবদিহি শাসন ব্যবস্থা, জনগণের ক্ষমতায়ন, জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে মানুষের উন্নয়ন নিশ্চিত করণে এখনও সাংবিধানিক নির্দেশনা পূরণ হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ৪৯২টি উপজেলা পরিষদের ১৪৭৬ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা আজ আত্মসম্মান আর মর্যাদা নিয়ে চলতে পারেন না। সাংবিধানিক আইন অমান্যের মাধ্যমে আজ তাদের মর্যাদা খর্ব করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের ইউএনওরা ১৪৩টি কমিটির সভাপতি থাকেন। আর উপজেলা চেয়ারম্যানরা থাকেন ৪ থেকে ৫টিতে। অথচ সাংবিধানিক নিয়মে এটি উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানদের থাকার কথা ছিল। আজ মন্ত্রণালয় থেকে উপজেলা প্রশাসনের কাছে পরিপত্র পাঠানো হয়। যা সংবিধান পরিপন্থি। উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে পাশ কাটিয়ে করা হচ্ছে বিভিন্ন কমিটি। ১৭টি বিভাগ চালানো হচ্ছে অনেকটা পাশ কাটিয়ে। সেটি আর চলতে দেওয়া যায় না। সাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সুপ্রিমকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করব।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নারীনেত্রী ও গাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, ময়মনসিংহ বিভাগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল করিম রাসেল।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিকুল আলম আজাদ, সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ, সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুর রহমান মফুর, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোয়েব আহমদ, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গবিন্দ দাস, সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিপা সিনহা।
আরসি-০৪