ওসমানীনগরের ভল্লবপুর যেন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


ডিসেম্বর ১৮, ২০২০
১১:২৬ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ১৮, ২০২০
১১:২৬ অপরাহ্ন



ওসমানীনগরের ভল্লবপুর যেন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ

সিলেটের ওসমানীনগরের বৃহৎ হাওর মুক্তারপুর। এর বুক চিড়ে প্রবাহমান সিঞ্জুরা নদী, অন্যপাশে আনন্দ খাল। হাওর-খাল আর নদীবেষ্টিত এক বিচ্ছিন্ন গ্রাম ভল্লবপুর। এই গ্রামে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। শুকনো মৌসুমে হাওর ও ক্ষেতের আলপথ দিয়ে হেঁটে এবং বর্ষায় নৌকায় চড়ে গ্রামবাসীকে হাট-বাজারে যেতে হয়। এই গ্রামে নেই কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা স্যাটেলাইট ক্লিনিক। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদেরও এ গ্রামে যাতায়াত নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে রোগবালাই হলে হাতুড়ে ডাক্তার আর ওঝা-বদ্যির ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভর করতে হয় তাদের। 

বর্ষায় এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে রূপ নেয় ভল্লবপুর। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় ফসলি জমিসহ অনেকের বাড়ি-ঘরও প্লাবিত হয়। নৌকা নিয়ে ঢেউ ভেঙ্গে হাওর-নদী পাড়ি দিতেও তখন ভয় পান অনেকে। ফলে অনেকেই গ্রামটিকে 'বিচ্ছিন্ন দ্বীপ' বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। বন্যা মৌসুমে ভল্লবপুরের দিক থেকে নদীর পানি ঢুকে আশপাশের অনেক ইউনিয়নও তলিয়ে যায়। 

শত বছর পূর্বে মৎস্যজীবীদের কেন্দ্র করে এই গ্রাম গড়ে উঠলেও কোনোকালেই লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। গ্রামে প্রায় ২৫০টি পরিবারের দুই সহস্রাধিক লোকের বাস। বর্ষায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে। আবার গ্রীষ্মে রাস্তার অভাবে হেঁটে ৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে কাছের বাজার হাজীপুরে যেতে হয়। গ্রামে সরকারি প্রতিষ্ঠান বলতে আছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাতেও নিয়মিত শিক্ষক উপস্থিত না হওয়ায় প্রায়ই পাঠদান বন্ধ থাকে। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে চিকিৎসাসেবা দেওয়াটাও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। এদিকে গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকার কারণে প্রতিবছর ফসলি জমি তলিয়ে যায়। ভল্লবপুরের দিকে নদীর পানি ঢুকে আশেপাশের অনেক ইউনিয়নও বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। 

সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নবঞ্চিত এই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ভল্লবপুর গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ স্থাপন, সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনসহ একাধিক পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ গেদাই বলেন, ‘ভল্লবপুর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ হতদরিদ্র। সবসময়ই এ গ্রামটি উন্নয়নবঞ্চিত। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছেন। নেওয়া হচ্ছে শতকোটি টাকার মহাপরিকল্পনা।’ 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন বলেন, ‘সম্প্রতি ভল্লবপুর এলাকা পরিদর্শন করেছি।’ এত বড় একটি হাওর পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় না আসায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে একটি মেগা প্রকল্প প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পাঠানো হবে।’

সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভল্লবপুর গ্রামে কোনো উন্নয়ন হয়নি। গ্রামের হাওর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি, নদী ও খাল খনন, সড়ক ও সেতু নির্মাণের জন্য পানিসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেছি। একটি মেগা প্রকল্প প্রণয়ন করে খুব শিগগিরই অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

 

ইউডি/আরআর-০৫