যে কার‌ণে সরে দাঁড়ালেন এসআই আকবরের আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক


ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
০৯:৫০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
০৬:২১ অপরাহ্ন



যে কার‌ণে সরে দাঁড়ালেন এসআই আকবরের আইনজীবী

পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে রায়হান হত্যার ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত বহিস্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার পক্ষে মামলা লড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তার আইনজীবী মো. মিসবাউর রহমান (আলম)। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) তিনি আকবরের পক্ষে দায়েরকৃত ওকালতনামা সারেন্ডার করার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত একটি  আবেদনও আদালতে দাখিল করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নেতিবাচক ও অশালীন ভাষায় আক্রমণ করায় এবং তার পরিবার ও সিনিয়র আইনজীবীকে জড়িয়ে বিরূপ ও অসম্মানজনক মন্তব্যের কারণে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।

মামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাওয়া প্রসঙ্গে আইনজীবী মো. মিসবাউর রহমান সিলেট মিরর-এর কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘আইন পেশায় বিগত বিশ বছর ধরে আমি হত্যা, অপহরণ থেকে শুরু করে নানা ধরণের মামলা পরিচালনা করেছি। রায়হান হত্যা মামলাও আমার কাছে তেমনি একটি মামলা। অধিক অর্থপ্রাপ্তির জন্য নয় বরং রায়হানের পক্ষে তার মামলা পরিচালনার জন্য যোগযোগ করা হলে পেশাগত দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমি মামলাটি গ্রহণ করেছিলাম। হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের মামলাটি আমার কাছে একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জের ছিল। কারণ সিলেটের আইন অঙ্গনে এই আইনে এর আগে কোনো মামলা হয়নি। তাই আইনজীবী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে মামলাটি আমি গ্রহণ করি। এখানে অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টি কখনই মূখ্য ছিল না। আকবরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই তার সত্যতা পাওয়া যাবে।’ 

আইনী সেবা পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাকে দণ্ডিত করা যায় না। তার উপর এ মামলাটি সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশের মামলা। এই দৃষ্টিকোণ থেকেও আকবরের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত হতে আমি সম্মত হয়েছিলাম।’

মো. মিসবাউর রহমান (আলম) হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘নিহত রায়হানের বোন ফেসবুক লাইভে এসে আইনজীবী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করলেও আমি দায়িত্ব নেওয়ায় তার নিন্দা জানিয়ে আবেগঘন বক্তব্য দেন। বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে আসামীপক্ষে আইনজীবী নিয়োগ তিনি ভালোভাবে নেননি।’

স্বজন হারানো যে কারো পক্ষে এমন আবেগতাড়িত হওয়া খুবই স্বাভাবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু লাইভের প্রতিক্রিয়ায় কিছু মানুষের চরম নেতিবাচক ও অশালীন মন্তব্য আমাকে যারপরনাই হতাশ করেছে। কিছু অনলাইন পত্রিকা এবং কিছু মানুষ আমার শ্রদ্ধাভাজন সিনিয়রকে জড়িয়ে এবং আমার পরিবার সম্পর্কেও বিরূপ ও অরুচিকর মন্তব্য করেছেন। যা আমার সিনিয়র ও আমার পরিবারকে আহত করেছে। আমার কারণে তারা এরূপ স্থুল আক্রমণের শিকার হোন তা কিছুতেই কম্য নয়। যে কারণে আমি আকবরের পক্ষে আইনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

প্রসঙ্গত, গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মারা যান রায়হান। এ ঘটনার পর সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ঘোষণা দেন, প্রধান অভিযুক্ত আকবরের পক্ষে সিলেটের কোনো আইনজীবী দাঁড়াবেন না। পরে দীর্ঘ বিলম্বিতে রায়হান হত্যার  প্রায় ২ মাস পর  গত ১০ ডিসেম্বর এসআই আকবরের পক্ষে ওকালতনামা দেন অ্যাডভোকেট মো. মিসবাউর রহমান (আলম)। কিন্তু দুই সপ্তাহের মাথায় গতকাল তিনি আইনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালেন।