নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
০৮:০৬ অপরাহ্ন
আপডেট : ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
০৮:০৬ অপরাহ্ন
‘ভাই, দুদিন ধরে ঘরে চাল নাই। ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখেও কিছু তুলে দিতে পারছি না। না খেয়ে মারাই যাব বোধহয়।’ এটি একটা খুদেবার্তা। করোনাভাইরাসের সময় কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ব্যক্তি এ খুদে বার্তা প্রেরণ করেন একটি মুঠোফোনে। সে বার্তা পেয়ে ওই পরিবারের কাছে গোপনে রাতের আঁধারে বস্তাভর্তি খাবার তুলে দেন সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীরা। পুরো লকডাউনজুড়ে এভাবেই মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নজির গড়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট। এ দুটি সংগঠনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় সিলেটের অর্ধলক্ষাধিকেরও বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তাঁরা কয়েকটি নির্ধারিত মুঠোফোন নম্বর ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে প্রচার করেছিলেন। করোনায় বিপাকে পড়া যে কেউ এই নম্বরে খাদ্য সহায়তা চাইলে তাঁরা তা গোপনে পৌঁছে দিতেন। মানবিক সহায়তাকেন্দ্রিক এ কর্মসূচির তাঁরা নাম দিয়েছিলেন ‘কলের গাড়ি’। নগরের রিকাবিবাজার এলাকার কবি নজরুল অডিটোরিয়াম থেকে এ কর্মসূচি প্রতিদিন পরিচালিত হতো। প্রায় ৬০ জন সংস্কৃতিকর্মী প্রতিদিন খাদ্যসামগ্রী কেনা ও প্যাকেটজাত করা থেকে শুরু করে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁদের তহবিলে আর্থিক সহায়তা করেছেন। এমনকি ছোট ছোট শিশুরাও তাদের মাটির ব্যাংকে জমানো পয়সা তুলে দিয়েছেন।
সংগঠন দুটির পুরো মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় করেছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম সেলিম, সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন ও সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী এবং সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশু ও সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত। এছাড়া সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষেও করোনাভাইরাসের শুরুর সময়টাতে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ থেকে শুরু করে সবজি ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ কাজে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বাবু, নাট্য-সংগঠক হুমায়ূন কবির জুয়েল প্রমুখ নেতৃত্ব দেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সংস্কৃতিকর্মীরা ছাড়াও করোনাভাইরাসের সময়টাতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ধণাঢ্য ব্যক্তি, প্রবাসী, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী ও সংগঠনের পক্ষ হতে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজের বিপাকে পড়া ব্যক্তিদের নগদ টাকা ও খাদ্যসামগ্রী সহায়তা করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনও সরকারের পক্ষ হতে সহায়তা করেছেন। সিলেটের সংসদ সদস্য ও নানা পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাও সহায়তা করেছেন। নগরের মীরের ময়দান এলাকার সমাজকর্মী ও নারী উদ্যোক্তা ফারমিছ আক্তার ব্যক্তি উদ্যোগে সহায়তা করেছেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা) কিনব্রিজের নিচে রাতের বেলা ভাসমান মানুষদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। পরিবেশবাদী সংগঠন ভ‚মিসন্তান বাংলাদেশ নগরের অভুক্ত প্রাণীদের খাবার বিতরণ করেছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেটের সভাপতি আবদুল জব্বার জলিলের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বিপাকে পড়া মানুষদের সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে পিপিই ও সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিও বেশ কিছু মানবিক উদ্যোগ নিয়েছিল। সিলেট জেলা পুলিশও অসংখ্য ব্যক্তিকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। সিলেটের কয়েক শ সংগঠন করোনাকালে মানবতার হাত প্রসারিত করে ত্রাণ সহায়তা করেছে।
সিলেটের বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মু. আনোয়ার হোসেন রনির নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে সিলেটের বাউল ও লোকশিল্পীদের আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিভিন্ন শুভানুধ্যায়ী ও প্রবাসীদের সহযোগিতায় প্রায় শতাধিক শিল্পীকে এ সহায়তা দেওয়া হয়।
এএন/বিএ-১১