তাহিরপুর প্রতিনিধি
জানুয়ারি ০১, ২০২১
১১:২৩ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ০১, ২০২১
১১:২৭ অপরাহ্ন
উৎসব আর হাওরাঞ্চল সমার্থক। যেকোনো উৎসবই হোক না কেন হাওর-বাওড়ের মানুষ এতে অংশ নেয়। ব্যতিক্রম নয় বই উৎসব। বছরের প্রথম দিন কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে বই উৎসবে যোগ দিতে স্কুলে হাজির হন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক সবাই।
কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক সবাই ভুগছে মহামারি করোনা আতংকে! সব ক্ষেত্রে সবার আগে প্রাধান্য পাচ্ছে তাই স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি। যে কারনে গত ১দশক ধরে চলে আসা বই উৎসবের রীতিনীতিও বদল হচ্ছে। বই উৎসবের বদলে হচ্ছে বই বিতরণ। গত কয়েক দশক ধরে শিক্ষার্থীরা নতুন বছরে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে স্কুলে ছুটে আসতে ব্যাকুল হয়ে উঠতো, এ যেন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে চলা আসা এ নিয়ম রীতি এবার আটকে দিয়েছে মহামারি করোনা ভাইরাস।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা ভেবেই সারাদেশের ন্যায় হাওরাঞ্চল খ্যাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুরেও সমাবেশ করে হচ্ছে না বই উৎসব। করোনাভাইরাসের কারণে বই উৎসব না হলেও বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা যাতে নতুন বই হাতে নিতে পারে সে জন্য নেয়া হয়েছে নানামুখী ব্যবস্থা।
উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মাধ্যমিক স্তরে সপ্তাহে তিন দিন করে মোট ১২ দিনে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। একেকটি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা তিন দিনে পৃথকভাবে এসে বইগুলো নিয়ে যাবে। অপরদিকর প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকটি ভেবে তাদের অভিভাবকদের হাতে বই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক বই বিতরণ করা হচ্ছে।
আজ শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় উপজেলা সদরের তাহিরপুর হিফজুল উলুম আলিম মাদ্রাসায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই বিতরণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ।
সরেজমিনে তাহিরপুরের বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা যায়, পৃথকভাবে বই বিতরণ করা জন্য বিতরণের আজ প্রথম দিনে উপস্থিতি ছিল কম সংখ্যক শিক্ষার্থীর। তবে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বই বিতরণের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে।
বাদাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্রও একই ছিল, ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি ছিল অতীতের তুলনায় অনেক কম। শুক্রবার ছুটির দিন এবং দীর্ঘ ৮মাস পর স্কুল খোলার কারনে এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্কুল খোললে আরো অনেক আনন্দ লাগবে, নতুন বই নিয়ে স্কুল আসতে ইচ্ছে করছে খুব। বই নিয়ে ফেরার পথে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বিথী আক্তার নামের এক প্রাথমিক শিক্ষার্থী।
বই হাতে পেয়ে হাজেরা খাতুন নামের ৭ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিব্যক্তি ছিল, বাড়িতে বসে পড়তে আর ভালো লাগেনা।
সূর্য্যেরগাঁও কান্দাহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পলি রায় জানান, করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর অতীতের ন্যায় উৎসব করে বই বিতরণ না করা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়েছে।
সোহালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সারোয়ার লিটন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হচ্ছে। নতুন বই হাতে পেয়ে সবাই উচ্ছসিত তবে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে।
বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম ধানু জানান, মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে কয়েক ধাপে ভাগ করে বই বিতরণের জন্য বলা হয়েছে। সে অনুসারেই কাজ করা হচ্ছে। আজ প্রথম দিন ৪০ জন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আবু সাঈদ এ প্রতিবেদককে বলেন, এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে বই উৎসব না করা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করা হয়েছে। শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় উপস্থিত কিছুটা কম ছিল তবে আশাব্যঞ্জক। পর্যাপ্ত বই ইতোমধ্যেই সবগুলো স্কুলে সরবরাহ করা হয়েছে। বইয়ের কোনো ঘাটতি নেই।
এএইচ/আরসি-১৩