শামস শামীম
জানুয়ারি ০২, ২০২১
০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ০২, ২০২১
০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের দক্ষিণে কুশিয়ারা নদীতে নির্মাণাধীন ‘রাণীগঞ্জ সেতু’ ও উত্তরে যাদুকাটা নদীতে নির্মাণাধীন ‘শাহ-আরেফিন অদ্বৈত মৈত্রী সেতু’ দু’টির নির্মাণকাজ এই নতুন বছরে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এই দু’টি সেতুর কাজ শেষ হলে সুনামগঞ্জের দু’টি অঞ্চলের নতুন দুয়ার খুলে যাবে। রাণীগঞ্জ সেতু হয়ে বিকল্প পথে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ এবং যাদুকাটা সেতু দিয়ে সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে অর্থনীতিতেও বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে আসবে। নতুন বছরে সেতু দু’টি চালু হবে বলে আশাবাদী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষজন।
জেলার ‘দক্ষিণের দুয়ার’ হিসেবে বিবেচিত কুশিয়ারা নদীতে রাণীগঞ্জ সেতুটির কাজ ২০১৬ সালে শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৭০২ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৩৩ ফুট প্রস্থের এই সেতুতে এপ্রোচ, কালভার্টসহ ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২১ সালের জুন মাসে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে সেতু নির্মাণে জড়িত চায়না ‘সিআর২৪বি’ নামের সংস্থাটি করোনার কারণে তাদের সেতু বিশেষজ্ঞদের না পাঠানোয় কাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। এখন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পদ্মা ও মেঘনা-গোমতি নদীতে সেতু নির্মাণে যুক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নদীর মধ্যখানে তিনটি ভক্স স্প্যান বসানোর কাজ শুরু করেছে। এই প্রথমবারের মতো দেশে এই সেতুতে একসঙ্গে ‘আই গার্ডার’ ও ‘বক্স গার্ডারের’ সমন্বয় করা হচ্ছে। ৬০টি আই গার্ডারের মধ্যে ৫০টি নির্মাণ হয়ে গেছে। ১২টি স্ল্যাবের মধ্যে ১০টি স্ল্যাবের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন ৩টি বক্স গার্ডার বা স্পাম বসানো শেষ হলেই সেতুর পুরো কাঠামো দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। এই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ৫৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমে প্রায় দুই ঘন্টা সময় বাঁচবে। এতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ ও বিকল্প যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এই সেতুটির প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্মাণকাজে যুক্ত চায়নার এক্সপার্টগণ করোনার কারণে আসছেন না। এতে বিলম্বিত হয়েছে কাজ। তাই আমরা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশীয় এক্সপার্টদের পরামর্শে এখন কাজ করছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ে কাজটি সম্পন্ন হবে। তবে যদি ওই সময়ে সম্পন্ন না করা যায়, তাহলে আমরা আরও অল্প কিছুদিন সময় বৃদ্ধি করব।’
এদিকে উত্তরের দুয়ার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে যাদুকাটা নদীতে নির্মাণাধীন শাহ আরেফিন অদ্বৈত মৈত্রী সেতুটি। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে সুনামগঞ্জের প্রায় পুরো সীমান্ত এলাকা সরাসরি যোগাযোগের আওতায় আসবে। এতে এলাকার যোগাযোগ ও অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে। ২০১৮ সালে কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। মহামারি করোনার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে কাজ। তাই ২০২১ সালেই এই সেতুর কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের এই সেতুটি ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ১৩৫টি পাইলের মধ্যে ১১৬টির কাজ শেষ হয়েছে। ৭৫টি গার্ডারের মধ্যে ২৬টি আর ১৫টি স্প্যানের মধ্যে ৫টি স্প্যানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাইল ক্যাপ ১৪টির মধ্যে ১০টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই সেতুর কাজ প্রায় ৫৫ ভাগ শেষ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘কনস্ট্রাকশন অব ইম্পর্টেন্ট ব্রিজেজ অন রুরাল রোড প্রকল্পে যাদুকাটা সেতুটির কাজ শুরু হয়। করোনা ও বন্যার কারণে কাজ কিছুটা থেমে আছে। তবে ২০২১ সালেই সেতুটি চালুর লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। এই সেতুটির কাজ শেষ হলে মোটামুটি সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় সরাসরি ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে।’
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট বলেন, ‘এই দুই সেতু আমাদের হাওর জেলার জীবনমান বদলে দেবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও সহজলভ্যতার কারণে ব্যবসার সম্প্রসারণ হবে। আমরা আশা করছি নতুন বছর ২০২১ সালে উভয় সেতুর কাজ শেষ হবে। আর এর উপকার ভোগ করতে পারব আমরা।’
এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘দক্ষিণের দুয়ার রাণীগঞ্জ সেতু ও উত্তরের দুয়ার যাদুকাটা সেতু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পিছিয়ে থাকা হাওর জেলা সুনামগঞ্জকে জাতীয় উন্নয়নে সমতায় নিয়ে আসতে এমন বৃহৎ কাজ বাস্তবায়ন করছেন। কিন্তু করোনার কারণে দুই সেতুর কাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। দুই সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে জেলার উন্নয়নে বিরাট পরিবর্তন আসবে। সেতুগুলোর কাজ যাতে যথাসময়ে সম্পন্ন হয় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে।’
এসএস/বিএ-০৯