বড়লেখায় স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা পরিষ্কার করলেন তরুণরা

এ.জে লাভলু, বড়লেখা


জানুয়ারি ০৯, ২০২১
১২:৫৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ০৯, ২০২১
১২:৫৩ পূর্বাহ্ন



বড়লেখায় স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা পরিষ্কার করলেন তরুণরা

কেউ ঝাড়ু দিচ্ছেন, কেউ ময়লা-আবর্জনা টুকরিতে ভরছেন, কেউ তা নির্দিষ্ট স্থানে রেখে আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছেন আবার কেউ সড়কের পাশে গজিয়ে ওঠা ছোটখাটো ঝোপঝাড় পরিষ্কার করছেন। আজ শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) সকালে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের সাইডিংবাজার এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। কাঁঠালতলী দক্ষিণ গ্রামের কয়েকজন তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমে কাঁঠালতলী-তেরাকুড়ি রাস্তার দুইপাশের প্রায় ১ কিলোমিটার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছেন।

এসব তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের কাঁঠালতলী বাজার (মৌলভীবাজার-চান্দগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়ক) থেকে পশ্চিম দিকে গেছে কাঁঠালতলী দক্ষিণ গ্রামের (সাইডিং বাজার) রাস্তা। রাস্তাটি সুজানগর ইউনিয়নের তেরাকুড়ি গ্রামের রাস্তার সঙ্গে মিশেছে। কাঁঠালতলী দক্ষিণ এলাকায় একটি উচ্চবিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাদরাসা রয়েছে। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ আসা-যাওয়া করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো যানবাহনও চলাচল করে। সড়কে দুইপাশে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি মুদি দোকান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব দোকান থেকে পলিথিনসহ ময়লা সড়কের পাশেই ফেলা হয়। এগুলো কখনও পোড়ানো বা সরানো হয়নি। ফলে ময়লা-আবর্জনাগুলো পচে পরিবেশ দূষিত হয়। এছাড়া সড়কের দুইপাশে গজিয়ে ওঠা ঝোপঝাড়ের কারণে সড়কও কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি স্থানীয় তরুণ সাঈব আহমদ ইয়াসের এসব কথা চিন্তা করে রাস্তার দুইপাশ পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেন। বিষয়টি তিনি এলাকার কয়েকজন তরুণকে জানান। পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে এলাকার ১০-১২ জন তরুণ সাইডিং বাজার এলাকায় কাঁঠালতলী-তেরাকুড়ি রাস্তার দুইপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেন।

এই কার্যক্রমের উদ্যোক্তা সাঈব আহমদ ইয়াসের বলেন, 'সাইডিংয়ে একসময় বড় বাজার ছিল। এই এলাকার অনেক ঐতিহ্য আছে। এলাকায় তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। রাস্তার দুইপাশে বেশ কয়েকটি মুদি দোকান আছে। এসব দোকান থেকে পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা সড়কের দুইপাশে ফেলা হয়। এসব ময়লা-আবর্জনা কারণে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নিই। পরে এলাকার ছোট-বড় কয়েকজনের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করি। তারা তাতে সাড়া দেন।'

তিনি বলেন, 'পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ (শুক্রবার) থেকে কাজ শুরু করেছি। প্রায় ১ কিলোমিটার আজকে পরিষ্কার করেছি। এসব জায়গায় জীবানুনাশক স্প্রে ছিটিয়েছি। পাশাপাশি যেসব মুদি দোকানী রাস্তার পাশে ময়লা ফেলতেন তাদের সচেতন করেছি। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।'

স্থানীয় মুদি দোকানী রফিক উদ্দিন বলেন, 'অনেকেই দোকান পরিষ্কার করে পলিথিনসহ ময়লা সড়কের পাশে ফেলে দিতেন। আজ এলাকার কয়েকজন তরুণ মিলে রাস্তার দুইপাশ পরিষ্কার করেছেন। তারা আমাদের এ বিষয়ে সচেতনও করেছেন। এখন থেকে আমরা আমাদের দোকানে পলিথিনসহ যা জমবে তা পুড়িয়ে ফেলব।'

কাঁঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য গৌছ উদ্দিন বলেন, 'রাস্তার দুইপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখে অনেক সুন্দর লাগছে। অতীতে কেউ এভাবে পরিষ্কার-পরিছন্ন করেনি। এলাকার পরিবেশ রক্ষায় তাদের মতো সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।'

দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন বলেন, 'যেকোনো কাজ সবাই মিলে এক সঙ্গে করলে তা সহজেই সম্পন্ন করা যায়, তা কাঁঠালতলী দক্ষিণ গ্রামের তরুণরা প্রমাণ করলেন। তারা রাস্তার দুইপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। সকালে আমি তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ঘুরে দেখেছি। তাদের মতো সবার উচিত নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা। তাহলে দেশ বদলে যাবে, এগিয়ে যাবে।

 

এজে/আরআর-০৫