সুরমায় পানি বাড়লে তলিয়ে যাবে সুনামগঞ্জের তিন হাওর

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


জানুয়ারি ২৫, ২০২১
০৭:৪০ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৫, ২০২১
০৭:৪০ অপরাহ্ন



সুরমায় পানি বাড়লে তলিয়ে যাবে সুনামগঞ্জের তিন হাওর

জামালগঞ্জের উজ্জ্বলপুর ও জাল্লাবাজ অংশের বিকল্প সড়ক। পাগনা হাওরের অধিক ঝুকিপূর্ণ ভাঙা (বামে)। গেল বন্যায় ভেঙে যাওয়া মূল সড়ক (ডানে)।

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের উজ্জ্বলপুর ও জাল্লাবাজের মাঝ অংশের সড়ক ভেঙে বৃহৎ ক্লোজারে পরিণত হয়েছে। গেল বর্ষা মৌসুমের উপর্যুপরি বন্যায় জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের এ অংশটুকু ভেঙ্গে যাওয়ায় পাগনা, মিনি পাগনা ও বলহরসহ ৩টি হাওর চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। সুরমা নদীর তীরবর্তী পাগনা হাওরের উত্তর-পূর্ব অংশে সৃষ্ট বৃহৎ হাওরখেকো এই ক্লোজারটি ভরাটকরণসহ দ্রুত নির্মাণের কোনো প্রস্তুতি না থাকায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

গত শনিবার ভীমখালী ইউনিয়নের উজ্জ্বলপুর-জাল্লাবাজ অংশ পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানিয়েছেন, সুরমায় পানি বাড়লে প্রথম ধাক্কায় তলিয়ে যাবে এই তিন হাওর। তখন হাওরের চারপাশে যে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে তা অর্থহীন হয়ে পড়বে। গত বন্যায় মূল সড়ক ভেঙে পড়ায় ভাঙনের শিকার এই জায়গাটি এখন জমিনের সমান্তরাল হয়ে গেছে। ভাঙনের একপাড় থেকে আরেকপাড়ের দূরত্ব হবে প্রায় হাজার ফুট। নদী যখন পানিতে ভরপুর হবে, তখন নদীলাগোয়া এই ভাঙা অংশ দিয়ে সবার আগে পানি ঢুকবে হাওরে। এতে শুধু এ উপজেলার পাগনা আর মিনি পাগনাই নয়, অন্য উপজেলার হাওরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিপজ্জনক এই ক্লোজার বদ্ধকরণে এখন পর্যন্ত কেউ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেনি। হাওররক্ষায় স্থানীয় কৃষকদের মতামত নিয়ে উজ্জ্বলপুর-জাল্লাবাজ অংশে বাঁধ নির্মাণ জরুরি বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

উজ্জ্বলপুর গ্রামের আইনুল হক বলেন, 'এই ভাঙার লাগি সারা হাওরই ঝুঁকিতে থাকব। গাঙে পানি বাড়লে পাগনাসহ ছোট-বড় সব হাওরেই পানি ঢুকব। এই হাওরের অন্যখাইন্দা যে বাঁধ দেওয়া হইতাছে, এইতা কোনো কাজো আইত না। আগে এই জায়গাটা বান্দা লাগব। কিন্তু এর লাগি কেউ আগাইয়া আইতাছে না। আমরা চিন্তায় আছি।'

উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ও পাগনা হাওরপাড়ের কৃষক অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, 'পাগনা হাওরের প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমির সুরক্ষার জন্য ৩টি বাঁধ অর্থাৎ ফুলিয়াটানা, বোগলাখালি ও উজ্জ্বলপুরের বাঁধ গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে উজ্জ্বলপুরের বাঁধ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। এজন্য পাগনা হাওর সম্পূর্ণ অরক্ষিত। হাওরে যদি পানি ঢোকে, এর জন্য কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকবে।'

এ ব্যাপারে ভীমখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া বলেন, 'উজ্জ্বলপুর-জাল্লাবাজের ভাঙাটি নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। এতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা তুলনামূলকভাবে খুব কম। হাওরকে ঝুঁকিমুক্ত করতে হলে সড়ক লেভেলে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে এবং এর জন্য বড় বরাদ্দ প্রয়োজন। এ নিয়ে আমরা ইউএনও ও এসও সাহেবের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছি, তারা আশ্বাস দিয়েছেন। এখন দেখা যাক কী হয়।'

ভীমখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও উজ্জ্বলপুর-জাল্লাবাজ ভাঙার পিআইসি সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াকিব বলেন, 'এই ভাঙাটি শুধু উজ্জ্বলপুর আর জাল্লাবাজের জন্য নয়, এটি সমগ্র হাওরবাসীর জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এটি একটি বৃহৎ ভাঙা। এ ভাঙা ভরাটে যে অল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন কিছু করার নেই।'

এ ব্যাপারে উপজেলা কাবিটা স্কিম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, 'এটা ইস্টিমেটের বিষয়, মেজারমেন্টের বিষয়। মেজারমেন্ট করে যেটা এসেছে, সে বরাদ্দই দেওয়া হয়েছে। হাইটের বিষয় আছে। হাইট যখন বাড়ানো হবে, ডিজাইন পাশ করা হবে, তখন সেটার বরাদ্দ বাড়বে। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন সেকশন অনুমোদন দেয়।'

 

বিআর/আরআর-০২