বিয়ানীবাজারে নিরুপায় মানুষকে ভরসা দিচ্ছে বাঁশের সাঁকো

শিপার আহমেদ, বিয়ানীবাজার


জানুয়ারি ২৫, ২০২১
০৭:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৫, ২০২১
০৭:৫৪ অপরাহ্ন



বিয়ানীবাজারে নিরুপায় মানুষকে ভরসা দিচ্ছে বাঁশের সাঁকো

নিজস্ব অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমে পাকা সেতুর আদলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ফুলমলিক এলাকার লোকজন। করতির খালের উপর ১৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ফুলমলিক ও চান্দ্রগ্রাম গ্রামের মধ্যে যোগাযোগের নতুন যুগের সূচনা করলেন গ্রামবাসী। পাশাপাশি দূর করলেন ৪৯ বছরের যোগাযোগ ভোগান্তির। করতির খালের উপর স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে দুর্ভোগ লাঘব করতে দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ফুলমলিক ও চন্দ্রগ্রামকে বিভক্ত করে রেখেছে করতির খাল। স্বাধীনতার পর থেকে এই খাল পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। কিন্তু এবার এলাকাবাসীর উদ্যোগে সেই ভোগান্তির সাময়িক অবসান হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এলাকা থেকে চাঁদা তোলে ফুলমলিক গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে খালের উপর গ্রামবাসী দেড়শ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে 'অসাধ্যকে' সাধন করেছেন। নির্মিত এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করবে অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন। গ্রামবাসী বাঁশ দিয়ে তৈরি এ সাঁকোর নাম দিয়েছেন ‘বাঁশের ব্রিজ’। গত শনিবার বিকেলে গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি উদ্বোধন করেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম পল্লব। 

তবে অনেকের প্রশ্ন- এই বাঁশের সাঁকো কত বছর টিকবে? তারা বলছেন, কয়েকমাস পর এটি ভেঙে যাবে। দ্রুত এখানে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 

সাঁকো নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া কামিল আহমদ বলেন, 'সাঁকো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। দুই গ্রাম থেকে সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তা পাওয়ায় কাজ শুরু হয়। সাঁকো নির্মাণে প্রায় দুইমাসের মতো সময় লেগেছে। সাঁকোটি অনেক মজবুত করে তৈরি করা হয়েছে। এ সাঁকো দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারে। স্বাধীনতার পর থেকে করতি খাল পারাপারের জন্য ফুলমলিক ও চন্দ্রগ্রামের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। এখন থেকে জরুরি প্রয়োজনে নিজ গ্রাম থেকে অটোরিকশা, রিকশা কিংবা মোটরসাইকেল নিয়েও যেতে পারবেন দুই গ্রামবাসী। সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে বাঁশের সাঁকো নির্মাণের পর।'

ফুলমলিক গ্রামের আবদুল লতিফ জানান, সাঁকোটি নির্মাণের ফলে ফুলমলিক ও চান্দগ্রামের ৫ হাজার পরিবার সুবিধা পাচ্ছে। যদিও সাঁকোটি বাঁশের তৈরি বলে এটি কতদিন টিকবে তা নিয়ে সংশয় আছে। এখানে যত দ্রুত সম্ভব সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। স্বাধীনতার পর থেকে ফুলমলিক ও চন্দ্রগ্রামের মানুষ উন্নয়নবঞ্চিত বলেও জানান তিনি।

আলীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ বলেন, 'বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত শত মানুষ এই সাঁকো দেখতে আসছেন। এমন একটি মহৎ উদ্যোগ সত্যি আমাকে অভিভূত করেছে। উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানাই। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় অনেক অসম্ভব কাজকে খুব সহজে সম্ভব করা যায়। সেটি করে দেখালেন ফুলমলিক গ্রামবাসী।'

 

এসএ/আরআর-০৩