প্রতিযোগিতায় না থেকেও পাড়ি দিয়েছিলেন ২১ কি.মি.

ক্রীড়া প্রতিবেদক


জানুয়ারি ২৮, ২০২১
১২:৫৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জানুয়ারি ২৮, ২০২১
০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন



প্রতিযোগিতায় না থেকেও পাড়ি দিয়েছিলেন ২১ কি.মি.

পূর্ব কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ছিলেন না প্রতিযোগীদের তালিকায়ও। তবু তিনি ২১ কিলোমিটার দৌড় শেষ করেছেন। নিজে দৌড়েছেন, দিয়েছেন অন্য নারীদের অনুপ্রেরণা। তালিকায় নাম না থাকায় প্রতিযোগিতার দিন দৃষ্টি এড়ালেও, দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর আয়োজকরা অনুপ্রেরণাদায়ী এই নারীকে দিলেন সম্মাননা।

পঞ্চাশোর্ধ রোজিনা আখতারকে মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) রাতে প্রতিযোগিতার স্বেচ্ছাসেবকদের গালা নাইটে সম্মাননা জানায় সিলেট রানার্স কমিউনিটি। রোজিনা আখতার দুই সন্তানের মা। সন্তানদের সঙ্গে গত শুক্রবার এসেছিলেন র‌্যাব ফোর্সেস হাফ ম্যারাথন দেখতে। ছেলে রাহেল ছিলেন ম্যারাথনের একজন স্বেচ্ছাসেবক। সকালবেলায় তিনি ছিলেন তালিকার বাইরের একজন। ভোরের আলোয় যখন দেখলেন বিভিন্ন বয়সী মেয়েরা দৌড়াতে এসেছে, তখন তিনিও তাদের সঙ্গে দৌড় শুরু করেন।

প্রতিযোগিতায় থাকা একাধিক নারী প্রতিযোগী জানান, যখন কোনো প্রতিযোগী আর দৌড়াতে পারছিলেন না, তখন তিনি উৎসাহ যুগিয়েছেন। অনুপ্রেরণা দিয়েছেন রোজিনা আখতার। এজন্য অনেকেই প্রেরণা পেয়েছেন, ক্লান্ত শরীরেও অনেকে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ না নিয়েও এই বয়সেও ঝুঁকি নিয়ে কেন দৌড় শুরু করলেন সে কথা গালা নাইটে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা ছিল। তাই যখন দেখলাম বিভিন্ন বয়সী মেয়েরা দৌড়াচ্ছে, তখন মনের মধ্যে একটা শঙ্কা জাগে। এসব মেয়েরা নিরাপদে দৌড় শেষ করতে পারে কি না। রাস্তায় কোনো ঝামেলার সম্মুখীন হয় কি না। কারণ এখানে সিলেটের বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিলেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনায় যেন সিলেটের সম্মানহানি না হয় সেজন্য আমি পুরোটা পথ পাড়ি দিয়েছি।’

রোজিনা আখতারকে সম্মানসূচক মেডেল পরিয়ে দিচ্ছেন সিলেট রানার্স কমিউনিটির সঞ্চালকরা 

 

হাতে একটা ব্যাগ এবং পায়ে স্যান্ডেল নিয়ে তিনি ২১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। পায়ে ফোঁসকা পড়েছে কিন্তু থামেন নি, রাস্তায় হোঁচটও খেয়েছেন কিন্তু দমে যাননি। শারীরিক অসুস্থতায় নিয়েছেন প্রতিযোগিতায় থাকা মেডিকেল টিমের প্রাথমিক চিকিৎসা। যখন নিশ্চিত হয়েছেন পেছনে আর কোনো মেয়ে নেই, তখন তিনি সবার শেষে ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করেন।

গত মঙ্গলবার রাতে স্বেচ্ছাসেবকদের গালা নাইটে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় সিলেট রানার্স কমিউনিটি। এ সময় তাকে ২১ কিলোমিটার দৌড়ের একটি ফিনিশিং মেডেল পরিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সিলেট রানার্স কমিউনিটির সঞ্চালক ডা. ওরাকাতুল জান্নাত বলেন, ‘দৌড়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে একজন মানুষ প্রতিযোগীর তালিকায় না থেকেও প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তাও আবার একজন স্বেচ্ছাসেবকের বেশে। যার লক্ষ্য একটাই-মেয়েরা যেন নিরাপদে দৌড় শেষ করতে পারে। এমন একজন মানুষকে সম্মান জানানো আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। প্রতিযোগিতার দিন জানতে পারলে আমরা সেদিন দিয়ে দিতাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় বিষয়টি। তাই স্বেচ্ছাসেবকদের গালা নাইটের দিনেই তাঁকে সম্মান জানিয়েছি আমরা।’