কুলাউড়ায় অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যার অভিযোগ

কুলাউড়া প্রতিনিধি


ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২১
০১:০৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২১
০১:০৯ পূর্বাহ্ন



কুলাউড়ায় অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যার অভিযোগ

মখলিছ মিয়া ও শোভা বেগম

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুরে তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় চলছে তোলপাড়। মৃত্যুর ৪০ ঘন্টা পর লাশ উদ্ধার করে হাওপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। ওই নারীর শ্বশুরের দাবি, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনি। আর নারীর বাবার বাড়ির লোকজনের দাবি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে ওই নারীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় এ মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। গত সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক ১০টায় মারা যাওয়া ওই নারীর নাম শোভা বেগম (১৯)।

জানা যায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর এলাকার ছুরুক আলী ও জবা বেগমের (কাতার প্রবাসী) মেয়ে শোভা ছোটবেলা থেকে নিজের নানাবাড়ি কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বিলেরপার গ্রামে থাকতেন। গত ৫ মাস আগে শোভার বিয়ে হয় উপজেলার সীমান্তবর্তী শরীফপুর ইউনিয়নের সঞ্জবপুর গ্রামের তৈমুছ আলীর ছেলে মখলিছ মিয়ার (২২) সঙ্গে।

শোভার মামা এমরান আলী জানান, শোভাকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তারা হাসপাতালে যাওয়ার পর সেখানে শোভার শ্বশুর তৈমুছ আলী জানান, শোভা স্ট্রোক করে মারা গেছে। শোভাকে জীবিত ভেবে দ্রুত মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান এমরান আলীশ স্বজনরা। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, লাশ দাফনের সময় শোভার শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেউ আসেনি। না আসার কারণ জানতে গিয়ে শুনলাম শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও স্বামীসহ আত্মীয়-স্বজনরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। ওইসময় থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন এখনও পলাতক। এতে সন্দেহ হয় শোভাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে হত্যা করেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মামলা করা হবে। 

তবে শোভার শ্বশুর তৈমুছ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বাড়িতে সন্ধ্যায় চা খাওয়ার সময় হঠাৎ শোভার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে দ্রুত তাকে কমলগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় শোভার নানীসহ আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। শোভা স্ট্রোক করে মারা গেছেন এবং তারা কেউ পলাতক নন বলে দাবি করেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যের কাতার থেকে টেলিফোনে কেঁদে কেঁদে শোভার মা জবা বেগম বলেন, সুখের আশায় মেয়ে বিয়ে দিলাম, কিন্তু আমার মেয়ের কপালে সুখ সইলো না। শোভার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে তাকে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।

শোভার নানী সুলতানা বেগম বলেন, আমার নাতনিকে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে। 

কুলাউড়া হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অভিজিৎ রায় জানান, হাসপাতালে নেওয়ার পর শোভার মৃত্যু হয়। ওইসময় তার নাক দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় সন্দেহ হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এরপর পুলিশকে বুঝিয়ে আত্মীয়রা তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভুষন রায় জানান, গত ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা মৌলভীবাজার থেকে লাশ নিয়ে দাফনের কাজ শুরু করেন। রহস্যজনক মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনপ্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

জেএইচ/আরআর-০৫