ধর্মপাশায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে অনিয়ম

শামীম আহমেদ, ধর্মপাশা


ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
১০:০১ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১
১০:০১ অপরাহ্ন



ধর্মপাশায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে অনিয়ম

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সরকারি জায়গা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভিটের বালি উত্তোলনের জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার কথা থাকলেও তা নেওয়া হয়নি। এতে করে স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার সরকারি দলের নেতা হওয়ায় প্রকাশ্যে এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছে না।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বন্যাপ্রবণ ও নদীভাঙন এলাকায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তিনতলা বিশিষ্ট বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ভবন নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে এ কাজটি পান মেসার্স অমল কান্তি চৌধুরী নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কাজের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩ কোটি ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৯২৯ টাকা। ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত বছরের ২৭ জুলাই। ভবন নির্মাণসহ যাবতীয় কাজ শেষ করার সময়সীমা রয়েছে ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ঠিকাদার গত বছরের নভেম্বরের মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ভবন নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীর নজরদারি না থাকায় কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারের নিয়োজিত শ্রমিকেরা তাদের ইচ্ছেমতো বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের কাজ করে আসছেন। নিম্নমানের বালু ও পাথর দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ভবনের ঢালাইয়ের কাজে স্টিলের সার্টার (ফর্মা) ব্যবহার করা কথা থাকলেও সেখানে কাঠের তৈরি ফর্মা ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া সপ্তাহখানেক ধরে মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনের সরকারি জায়গায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সেখান থেকে ভিটের বালু উত্তোলন করে তা বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ভবনের ভিট নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে দুই থেকে তিন শতক জায়গাজুড়ে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গত দুইদিন ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভিটের বালু উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

মধ্যনগর পাবলিক পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, 'বিদ্যালয়ের পেছনে সরকারি জায়গা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন কাজটিতে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ঠিকাদারের লোকজনকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ফলে সেখানে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যনগর থানা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, 'অমল কান্তি চৌধুরী আমাদের সরকারদলীয় নেতা। কিন্তু তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের কাজে নিম্নমানের বালু ও পাথর ব্যবহারসহ নানাভাবে অনিয়ম করে আসছেন। যে জায়গাটি থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভিটের বালি উত্তোলন করা হয়েছে, সেটি সম্ভাব্য মধ্যনগর উপজেলা পরিষদের (এখনও উপজেলা বাস্তবায়ন হয়নি) নির্ধারিত স্থান। মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনের সরকারি সমতল জায়গা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভিটের বালি উত্তোলন করা হয়েছে। এতে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভবন নির্মাণ কাজের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়গুলো তদন্ত করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।'

ঠিকাদার অমল কান্তি চৌধুরী নিজেকে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য দাবি করে বলেন, 'বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কাজে বালু ও পাথর নিম্নমানের ব্যবহার করার অভিযোগটি সঠিক নয়। ঢালাইয়ের কাজে স্টিলের ফর্মা ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদ্যালয়টির উন্নয়ন কাজের স্বার্থে নিরুপায় হয়ে আমরা বিদ্যালয়ের পেছনের সরকারি জায়গা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভিটের বালু উত্তোলন করছি। তবে কোনো অনুমতি নেইনি। আমি এ নিয়ে দলীয় কোনো প্রভাবও খাটাইনি।'

বন্যাপ্রবণ ও নদীভাঙন এলাকায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের সুনামগঞ্জ জেলার তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী উছমান গণি বলেন, 'আমাকে একা পুরো সুনামগঞ্জ জেলায় এরকম ২৫টি কাজ দেখভাল করতে হয়। তাই নিয়মিত সেখানে থাকা সম্ভব হয় না।  সরেজমিনে গিয়ে দেখে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

আর ধর্মপাশার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, 'উপজেলার মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চবিদ্যালয়টিতে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের কাজের ঠিকাদার সরকারি জায়গা থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেননি। খোঁজ নিয়ে দ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

 

এসএ/আরআর-০৮