জগন্নাথপুর প্রতিনিধি
মার্চ ০৩, ২০২১
০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ০৩, ২০২১
০৩:২৭ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ অংশে কোন্দানালা সেতু ধসে পড়ার ঘটনায় দু'টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কমিটি সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে আর অপরটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, আজ মঙ্গলবার (২ মার্চ) মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সচিব জাকির হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নকশা (ডিজাইন) বিভাগের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিশির কুমার রাওকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যরা হলেন- তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাহাদাত হোসেন ও নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার আহমদ।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, 'শুনেছি সেতু ধসে পড়ার ঘটনায় মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে সেতু ও ডিজাইন বিভাগের পক্ষ থেকে করা তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ধসে পড়া গার্ডার সরিয়ে কাজ শুরু করতে বলেছি।'
এদিকে সেতু ধসে পড়ার ঘটনায় জগন্নাথপুরে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। নিম্নমানের কাজের কারণে সেতুটি ভেঙে পড়েছে বলে উপজেলাবাসীর অভিমত। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে।
এলাকাবাসী জানান, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে জগন্নাথপুর তথা সুনামগঞ্জের দূরত্ব কমাতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের ডাবর পয়েন্ট থেকে পাগলা-জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক হচ্ছে। এই সড়কের প্রশস্তকরণ দেড় বছর পূর্বে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাবর পয়েন্ট থেকে জগন্নাথপুর পর্যন্ত ড্রেনেজসহ ২২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ডাবর থেকে জগন্নাথপুর অংশে পুরাতন সেতুগুলো ভেঙে ৭টি নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় প্রায় ৬ মাস আগে। ৭টি সেতু নির্মাণের কাজে ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজ করছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। গত রবিবার রাতে ওই সড়কের জগন্নাথপুর অংশের কোন্দানালা খালের উপর প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ ফুট ১২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ ফুট ২৫ মিটার প্রস্থের নির্মাণাধীন সেতুটি ধসে পড়ে। অভিযোগ উঠেছে, নিম্নমানের কাজের জন্য সেতুটি ভেঙে পড়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ অভিযোগ অস্বীকার বলেছে, টেকনিক্যাল সমস্যায় গার্ডারগুলো ভেঙে পড়েছে।
এদিকে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে এখন শঙ্কায় পড়েছেন উপজেলাবাসী। প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর উপর দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণের কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া সড়কের উপর ৭টি সেতুর কাজ করছে ওই প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি সেতু উদ্বোধনের আগেই ভেঙে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের কাজের মান নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা বলেন, 'নির্মাণকালে সেতু ধসে পড়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ নিয়ে এখন মানুষজনের মধ্যে ক্ষোভ আর সন্দেহ বিরাজ করছে। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।' একই সঙ্গে কাজের মানের দিকে নজর দেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
এএ/আরআর-১৩