বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
মার্চ ০৬, ২০২১
০২:৪২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ০৬, ২০২১
০২:৪২ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ফলনকৃত টমেটো নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পাইকারি বাজারে ৮০ টাকা মণ দরে বিক্রি হওয়া টমেটো এখন পচে-গলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে। ক্ষেত থেকে উত্তোলন করতে গিয়ে চাষিদের শ্রম, ঘাম ও পরিবহন খরচ বাবদ যে ব্যয় হচ্ছে, সে খরচই উঠছে না বিধায় ক্ষেতেই পড়ে থাকছে যতেœ আবাদকৃত এসব টমেটো। কেউ আবার টমেটো তুলে মান্নানঘাট পাইকারি বাজারে নিয়ে গেলেও তা বিক্রি করতে না পেরে সুরমা নদীর তীরে ফেলে যাচ্ছেন। এতে লাভবান হওয়া দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
প্রতিবছর এখানকার টমেটো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার সুবাদে শহরাঞ্চলের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছে। এছাড়া সস ও জুস তৈরির এ মূল্যবান কাঁচামাল এখন জমিসহ নদীর তীরে পচে নষ্ট হচ্ছে। প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ টমেটো একসময় ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। তবে টমেটো উৎপাদনে প্রসিদ্ধ এ অঞ্চলে মজুদ করার কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া এখানকার চাষিরা সরকারি সার-বীজসহ কোনো ধরনের ঋণ সহায়তাও পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মান্নানঘাট পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঠেলাগাড়িতে করে চাষিরা টমেটো ও করলা নিয়ে আসছেন বাজারে। পরে সেগুলো মেপে নৌকায় তোলা হচ্ছে। ৩০ টাকা কেজি দরে করলা বিক্রি হলেও টমেটো বিক্রি হচ্ছে মাত্র দুই টাকায়। বর্তমানে টমেটোর তেমন চাহিদা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে অবিক্রিত টমেটো নদীর তীরে ফেলে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন চাষিরা। শ্রমে-ঘামে আবাদ করা টমেটো বিক্রি করতে না পারায় চাষিদের মুখে হতাশার সুর ফুটে উঠেছে।
টমেটো চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত টমেটো বিক্রয়ের মাধ্যমে মান্নানঘাট বাজারের উৎপত্তি হয়। এ অঞ্চলের উৎপাদিত টমেটো ও অন্যান্য সব সবজি পাইকাররা এখান থেকে কিনে নৌকাযোগে ঢাকা, সিলেট, ভৈরব, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। উপজেলার রামপুর, কাশিপুর, শরীফপুর, চাঁনপুর ও সংবাদপুরের প্রায় কয়েক হাজার চাষি আবাদকৃত বিভিন্ন জাতের সবজি বিক্রির উদ্দেশে মান্নানঘাট পাইকাঋ বাজারে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে টমেটো, করলা, লাউ ও শিম অন্যতম। এবছর বেশি লাভের আশায় টমেটো চাষে ঝুঁকে পড়েন এখানকার কৃষকরা। তবে ফলন সন্তোষজনক হলেও বিক্রিতে উত্তোলনের খরচই উঠছে না। প্রথম পর্যায়ে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলেও এখন ২ টাকায় এসে ঠেকেছে টমেটোর দর। এতে চাষিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
কাশিপুর গ্রামের কৃষক মনির উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রায় ১ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন তিনি। এতে তার খরচ হয়েছে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। আর বিক্রি করেছেন মাত্র ১০ থেকে ১১ হাজার টাকার টমেটো। তাতে উৎপাদন খরচের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। টমেটো চাষ করতে গিয়ে মাইট্টা সার, লাল সার, জিপসাম ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়েছে তাকে। পরিচর্যার দেড় মাসের মাথায় ফলন হয়েছে। কিন্তু ফলন ভালো হলেও বাজারে গিয়ে ধরাশায়ী হতে হচ্ছে তাকে।
কাশিপুর গুচ্ছগ্রামের কৃষক মো. হারিছ মিয়া বলেন, 'এইবার সবজির দাম এক্কেবারে কম। দুই টাকা/আড়াই টাকা দরে টমেটো বিক্রি করা লাগতাছে। ১ বিঘা জমি চাষ করে এইবার টমেটো বিক্রি করছি মাত্র ৪৫ হাজার টাকার। গত বছর এই জমিতেই টমেটো ও লাউ বিক্রি করছিলাম ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার। এই বছর খুব লস হইছে।'
কাশিপুর গ্রামের আরেক টমেটো চাষি ইয়ার আলী জানিয়েছেন, এবার তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিনে টমেটো চাষ করেছেন। এতে ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার টাকার বেশি। কিন্তু টমেটো বিক্রি করেছেন মাত্র লাখখানেক টাকার। গত বছর একই জমিতে উৎপাদিত প্রায় ২ লাখ টাকার বেশি টমেটো বিক্রি করেছেন তিনি। তাদের আবাদকৃত টমেটো বেশিদিন মজুদ রাখতে এ এলাকায় হিমাগার স্থাপনসহ সরকারি ঋণ ও সার-বীজ সুবিধাপ্রাপ্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মান্নানঘাট বাজারের টমেটো আড়ৎদার সালাম মিয়া ও শহীদ মিয়া জানিয়েছেন, টমেটো এখন ২ টাকা কেজি দরে ক্রয় করছেন তারা। বর্তমানে টমেটোর তেমন চাহিদা নেই। তাই দাম কম। প্রতিদিনই কৃষক প্রচুর টমেটো বাজারে নিয়ে আসছেন। কিন্তু দাম কম হওয়ায় তারা হতাশা প্রকাশ করছেন। আড়ৎদাররাও বিপদে আছেন। লোকসান দিতে দিতে জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি আড়ৎদাররা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাশরেফুল আলম বলেন, 'কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টমেটো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন করা যেতে পারে। তবে হিমাগার স্থাপনে আপাতত কৃষি বিভাগের কোনো উদ্যোগ নেই।'
বিআর/আরআর-০৯