শামস শামীম, সুনামগঞ্জ
মার্চ ০৬, ২০২১
১১:২৬ অপরাহ্ন
আপডেট : মার্চ ০৭, ২০২১
১১:৫৪ অপরাহ্ন
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে হাওরের প্রকৃত কৃষকদের মাধ্যমে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকল্পে ২০১৮ সাল থেকে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) প্রথা চালু হয়েছে। হাওরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে এ প্রথা চালু হলেও এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড পিআইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ ও সমালোচিত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে বলে হাওর আন্দোলন নেতাদের অভিযোগ। পিআইসি ও স্থানীয় মধ্যস্বত্ত্বভোগী রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের কৌশলে ব্যবহার করে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে টাকা হাতিয়ে নিতে গত কয়েকবছর ধরে চেষ্টা করছে পাউবো। গতবছর মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ একটি অবাস্তব তদন্ত প্রতিবেদনকে জেলা কমিটি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল। পাউবো গোপনে পিআইসি'র বিরুদ্ধে ওই তদন্ত প্রতিবেদন ভরা বর্ষায় করেছিল বলে জানা গেছে।
হাওরের একাধিক পিআইসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদনের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তা ও উপজেলা কমিটিকে কিছু টাকা দিতে হয়েছে। বিনিময়ে তারা অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে অধিক বরাদ্দ অনুমোদন করে নিয়েছেন। আর্থিক সুবিধা পেয়ে পাউবো'র সার্ভেয়ার ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীরাও বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুণ। এখন প্রতিটি বিলের সময়ে ২০ ভাগ অর্থ আগাম দিতে হয় তাদেরকে। না হলে পোস্ট ওয়ার্কে তাদেরকে আটকানোর চেষ্টা করা হয়।
পিআইসিরা আরও জানিয়েছেন, উপজেলা কমিটি প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে দেনদরবারে লিপ্ত থাকায় কার্যাদেশ বিলম্বে দেওয়া হয়। এবারও বিলম্বে কার্যাদেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যে কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। এখন বিলম্বে কার্যাদেশ দিয়ে পিআইসিকে দ্রুত কাজ করার তাড়া দেওয়া হচ্ছে। যথাসময়ে কার্যাদেশ দিলে তারা যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারতেন। কিন্তু সেই সুযোগ দেয়নি পাউবো।
এদিকে কিছু কিছু পিআইসির লোকজন সততার সঙ্গে কাজ করতে চাইলে বাধা হয়ে দাড়ায় পাউবো'র দুর্নীতিবাজ চক্র। ওই পিআইসিগুলো কাজ করিয়ে পাউবোকে কমিশন দিতে অস্বীকার করলে তাদেরকে পোস্ট ওয়ার্কের রিপোর্টে আটকে দেওয়া হয়। যার ফলে কেউ আর প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। তাই তারাও পাউবো'র দুর্নীতির দুষ্টচক্রে জড়িয়ে পড়েন।
হাওর আন্দোলনের নেতা অমর চাঁদ দাস বলেন, 'আমরা কয়েক দশক ধরে কৃষকের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের জন্য আন্দোলন করার সুফল হিসেবে পেয়েছিলাম পিআইসি। কিন্তু অনভিজ্ঞ পিআইসি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও প্রশাসনিক দুর্নীতিচক্রের মারপ্যাঁচে ঢুকে নিজেরাও সমালোচিত হচ্ছে। এখন পাউবো এ সুযোগ নিতে চাইছে। তারা কৌশলে পিআইসি প্রথাকে সমালোচিত করে ঠিকাদারি প্রথায় ফিরতে চায়।'
কৃষক সংহতির সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল তুহিন বলেন, 'আমাদের আন্দোলনে পিআইসি পদ্ধতি চালু হয়েছে। এখন এই পদ্ধতিকে নষ্ট করতে বিভিন্ন সুবিধাবাদী মহল এক হয়ে দুর্নীতির প্রকল্পের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রকৃত কৃষক গণশুনানির মাধ্যমে এলে এ সমস্যা হতো না। কিন্তু মধ্যস্বত্তভোগীরা পিআইসিতে আসায় দুর্নীতি ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাড়িয়ে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করার চেষ্টা চলছে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল হুদা বলেন, 'উপজেলা কমিটি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রকল্প এনে তারপর প্রাক্কলণ করে। উপজেলা কমিটিই অনুমোদন দেয় প্রকল্প। পাউবো একক কিছু করে না।'
এসএস/আরআর-০১