বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
মার্চ ১১, ২০২১
১২:২১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ১১, ২০২১
১২:২১ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে নদী ও খাল-বিল শুকিয়ে অবাধে মাছ নিধনের মচ্ছব শুরু হয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন মাছের বংশ বিস্তার রোধ করা হচ্ছে, অন্যদিকে জলাশয়ের তলদেশ শুকিয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে। এছাড়া কৃষিজমিতে সেচ সুবিধা ও গোসলসহ মানুষের নিত্যকর্ম সারতে যে সামান্য পানি প্রয়োজন, খাল-বিল ও নদীর তলদেশে তাও অবশিষ্ট রাখা হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো জলাশয় শুকিয়ে মাছ নিধনের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। জলাশয় পুরোপুরি সেচে পানি নিষ্কাশন করে মৎস্য আহরণ করছে অবৈধ মাছ শিকারি সংঘবদ্ধ চক্র। এ নিয়ে অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছেন না অভিযোগকারীরা। কোনো অভিযোগই আমলে নিতে চাইছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত রবিবার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের দিরাই চাতল বিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভীমখালী ইউনিয়নের ভান্ডা গ্রামের মোস্তফা আলমের নেতৃত্বে বিলের চারপাশ শুকিয়ে মাছ ধরা অব্যাহত রাখা হয়েছে। মেশিনচালিত লোহার মোটা পাইপ বসিয়ে বিলের তলদেশে থাকা অবশিষ্ট পানি শুকানোর কাজ চালানো হচ্ছে বেশ জোরেশোরে। সাংবাদিকের উপস্থিতিতেও থামেনি সেচযন্ত্র। সেচের ফলে মাছের অভয়াশ্রম খ্যাত এই বিলের চারপাশে জেগে উঠেছে ক্ষতচিহ্ন। তবুও চলছে ছোট-বড় মাছ নিধনের অপতৎপরতা। বিল থেকে তুলে আনা ছোট মাছ স্তুপ করে এক জায়গায় রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে বড় মাছগুলো বিলের পাড়ে গর্ত করা পানিতে ফেলা হচ্ছে। এ যেন মাছের বংশবিস্তার রোধসহ পরিবেশ দূষণের অবাধ তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এভাবে একের পর এক জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা অব্যাহত থাকলেও এক্ষেত্রে নির্বিকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিলের তলদেশ শুকিয়ে মাছ ধরা বৈধ কি না জানতে চাইলে মাছ শিকারি মোস্তফা আলম জানান, তিনি যা করছেন তা সম্পূর্ণ অবৈধ। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতেই এমনটা করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রাম সংলগ্ন চাটনী বিল, বিনাজুরা ও উদয়পুর গ্রামের মধ্যবর্তী লড়কি বিল, খোঁজারগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী চন্দ্রঘোনা বিল, তেরানগরের দৌলতা নদী, হটামারা গ্রাম সংলগ্ন হকিয়াডুকি বিল, ভীমখালী ইউনিয়নের দেউতান বিল ও বেহেলী ইউনিয়নের বদরপুর সংলগ্ন ঘনিয়ার বিল, বেহেলী বাজারের পশ্চিমের কসমার বিলসহ এমন অনেক বিলের তলা শুকিয়ে মাছ ধরা প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এছাড়া সংঘবদ্ধ এই মাছ শিকারি চক্র বাকি সকল বিলে অবৈধ পন্থায় মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর চাটনীপাড়া গ্রামের ঝিনুক মিয়া জানিয়েছেন, চাটনী বিলে গত এক সপ্তাহ ধরে মাছ ধরা অব্যাহত আছে। এ বিলের ইজারা যে মৎসজীবী
সমিতি পেয়েছে, তার সভাপতি লক্ষ্মীপুর নতুনপাড়া গ্রামের আজিবুর। সমিতির কাছ থেকে যারা লিজ নিয়েছে, তারাসহ সমিতির মানুষ মিলেই পানি শুকিয়ে মাছ ধরার কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।
মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আজিবুর রহমান মাছ ধরার কথা অস্বীকার করে বলেন, 'আমরা বিল শুকাইয়া মাছ ধরি নাই। কৃষকে মেশিন উঠাইয়া নিয়া নিছে পরের দিন। পরে আমরা আর মাছ ধরছি না।'
এছাড়া সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেহেলী ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী বৌলাই নদীর শাখা পুটিয়া নদীতে গ্রামবাসীর বাধা উপেক্ষা করে অবৈধ মাছ শিকারিরা মেশিন বসিয়ে মাছ শিকারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পরে এই প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়ে তারা। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে অবৈধ মাছ শিকারী হরিনগর (বাগানী) গ্রামের তুরাব আলী, কামাল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও কামলাবাজ গ্রামের মো. তারেকের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ চক্র আবারও একই কাজ করতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাধার মুখে তারা সেচকার্য বন্ধ রাখলেও পরে বিষ ফেলে মাছ শিকার করেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বেহেলী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, সকলের বাধার মুখে প্রথমে শিকারিরা চলে যায়। পরে আবার এসে মেশিন চালু করে প্রায় ২ ঘন্টা পানি সেচ অব্যাহত রাখে। এরপর তিনি আবার এসে তাদেরকে মেশিন বন্ধ রাখতে বাধ্য করেন। কিন্তু পরে পানি সেচ করতে না পেরে তারা বিষ ফেলে মাছ ধরে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনন্দা মোদক জানিয়েছেন, দিরাই চাতল বিলের খননকাজ চলছে। তিনি যতটুকু জেনেছেন, এই বিলের পানি জমিতে নেওয়া হচ্ছে। আর চাটনী বিলের কথা তিনি শুনেছেন। সেখানে লোক পাঠানো প্রয়োজন। কিন্তু অফিসে স্টাফ না থাকার কারণে মোবাইল কোর্ট করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিআর/আরআর-০১