জগন্নাথপুরে কৃষকদের মনে আশা জাগাচ্ছে সূর্যমুখী

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর


মার্চ ১১, ২০২১
১১:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ১২, ২০২১
০১:১১ পূর্বাহ্ন



জগন্নাথপুরে কৃষকদের মনে আশা জাগাচ্ছে সূর্যমুখী

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের একটি হাওরের পরিত্যক্ত জমিতে সবুজের বুকে হলুদ রঙের আভাস ছড়িয়েছে সূর্যমুখী ফুল। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তা দেখতে মাঠে ভিড় করছেন। হলুদের হাসিতে হাসছেন তারাও। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে ক্যামেরায় তুলছেন গ্রুপ ছবি। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে সেলফি। মনের আনন্দ আর হাসিতে ছবি তোলার পাশাপাশি ফুলের ঘ্রাণে নিজেকে মাতিয়ে তুলছেন সৌন্দর্য পিপাসুরা।  

গতকাল বুধবার বিকেলে উপজেলা সদর থেকে আধা কিলোমিটার অদূরে অবস্থিত পাগলা-জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের পূর্বপাশের হাসিনাবাদ হাওরে সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।  

জগন্নাথপুর পৌরসভার জগন্নাথপুর এলাকার বাসিন্দা কৃষক ওয়াসিম আহমদ ও একই এলাকার শামিম আহমদ মহাসড়কের পাশে এই সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করেছেন। হাওরের পরিত্যক্ত ৬ কেদার (৩০ শতাংশে এক কেদার) জমিতে প্রথমবারের মতো এই দুই কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

সূর্যমুখী ফলানো বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে ফুটেছে ফুল। পুরো মাঠ হলদে ফুলে সুশোভিত। সূর্যমুখী ফুলের আবাদ দেখে দূর থেকে তাকালে যে কারও মনে হতে পারে প্রকৃতি যেন হলুদ গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। এছাড়া বাগানের পাশে স্থাপন করা হয়েছে রাণী মৌমাছির বাক্স। ফুলে ফুলে মৌমাছির গুনগুন শব্দে এক আনন্দদায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে। 

প্রতিদিন বিকেলে জগন্নাথপুর পৌরশহরসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সী সৌন্দর্য পিপাসুরা সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে আসেন। সূর্যমুখী বাগানে তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ক্যামেরায় ছবি তুলছিলেন জগন্নাথপুরের প্রত্যন্ত এলাকা জালালপুর গ্রামের তোফায়েল নামের এক তরুণ। তিনি বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখেছি অনেকে সূর্যমুখী ফুলের বাগানের ছবি তুলে ভাইরাল করছেন। এ খবর পেয়ে আমরা তিন বন্ধু এখানে এসেছি। হলদে ফুলে সাজানো এই মনোমুগন্ধকর বাগান ঘুরে দেখছি আমরা। মনের আনন্দে ছবি তুলছি। খুবই ভালো সময় কাটছে।' 

বাগানে কথা হয় পৌরশহরের বাসিন্দা জগন্নাথপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'জগন্নাথপুরে সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য কোনো পার্ক কিংবা আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট গড়ে ওঠেনি। শহর থেকে অদূরে আবাদ করা এই সূর্যমুখী বাগান তাই আকৃষ্ট করছে জনসাধারণকে। সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে, তখন মৃদু রোদে সূর্যমুখী ফুলে এক অপরূপ সৌন্দর্য ফোটে ওঠে। যেন এক সূর্যের মেলা।'

সূর্যমুখী বাগানের দুই চাষি ওয়াসিম আহমদ ও শামিম আহমদ বলেন, 'স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে হাওরের পরিত্যক্ত ৬ কেদার জমিতে প্রথমবারের মতো এবার সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছি আমরা। সরকারিভাবে সূর্যমুখীর বীজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। তিনমাস আগে আবাদ শুরু করি আমরা। এখন গাছে গাছে ফুল ধরেছে। আরও ১০ থেকে ১২ দিন পর ফুল থেকে বীজ পাওয়া যাবে। তবে এই চাষে ব্যয় নিতান্তই কম। আশা করছি সূর্যমুখী ফুলের ফলনে সফলতা আসবে। সূর্যমুখী চাষে আনন্দ পাচ্ছি। প্রতিদিন লোকজন বাগানে এসে ছবি তুলছেন এবং আমাদের পরিচিতিও বেড়েছে এলাকায়। 

এই দুই কৃষক আরও বলেন, 'সূর্যমুখী বাগানের পাশাপাশি সরিষা, তিশি, ক্ষীরা, ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এই মৌসুমে এখানে বোরো আবাদ হয় না। শুধু রোপা আমন হয় এখানে। তাই পরিত্যক্ত জমিতে এবার সূর্যমুখী, ভুট্টা, সরিষা, ত্রিশি, ক্ষীরা আমরা চাষ করেছি কৃষি অফিসের সহযোগিতায়।'

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গতবছর প্রথম জগন্নাথপুরে সূর্যমুখী চাষ করা হয় মাত্র ২০ বিঘা জমিতে। চাষির সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ জন। এবার ব্যাপকভাবে জগন্নাথপুরের হাসিনাবাদ, শেরপুর, মজিদপুর, কলকলিয়া, হামিদপুর, পাটলী, বনগাঁও, শ্রীরামসী, শেওরা, বাগময়না, রানীনগর, হাড়গ্রামসহ জগন্নাথপুরে ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন ৭০ জন চাষি। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব খাতের আওতায় স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে জগন্নাথপুরে এ বছর ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী হাইসান-৩৩ আবাদ করা হয়েছে। সূর্যমুখী চাষের ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে কৃষকরা সূর্যমুখী ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাত মন বীজ পাওয়া যাবে। বিঘাপ্রতি ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতেই তারা সূর্যমুখী চাষে উৎসাহিত করছেন। 

তিনি আরও জানান, বাজারে অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান থাকে সূর্যমুখীতে তা নেই। বিশেষ করে সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরল থাকে না। এই তেলের দাম অন্য তেলের চেয়ে একটু বেশি হলেও এটি খুবই উপকারী। 

জগন্নাথপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, 'সরকার থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে সূর্যমুখী ফুলের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার এই উপজেলায় বেশি সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখী চাষ।'

 

এএ/আরআর-০১