বখাটের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী, বাড়িছাড়া মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি


মে ২০, ২০২১
০৩:০৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২০, ২০২১
০৩:০৪ পূর্বাহ্ন



বখাটের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী, বাড়িছাড়া মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে মদ্যপ বখাটে শাহজাহানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন গ্রামবাসী। ইতোমধ্যে তার অত্যাচার ও নির্যাতনে বাড়িঘর ছেড়েছে এক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। সম্প্রতি রাতের অন্ধকারে মদ্যপ অবস্থায় তালা ভেঙে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর করেন ওই যুবক। পরে মসজিদের জানালা ভাঙার চেষ্টা করলে শব্দ শুনে ঘুমন্ত গ্রামবাসী ছুটে এলে বখাটে শাহজাহান পালিয়ে যান। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ঘটনার একদিন পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তার বাড়ি থেকে ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। পুলিশের ভয়ে ওইদিন তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। 

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বখাটে শাহজাহান উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পশ্চিম টিলাগাঁও গ্রামের আবুল মিয়ার পুত্র। তিনি এলাকায় একজন চিহ্নিত বখাটে। চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, মাদকসেবন, নারী নির্যাতনসহ একাধিক মামলার আসামি তিনি। ইতোপূর্বে একাধিক মামলায় জেল খাটলেও জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

অভিযোগ রয়েছে, শাহজাহান মদ, গাঁজা, ইয়াবা সেবন করে প্রতি রাতেই মানুষের বাড়িঘরে হানা দেন। তার উৎপাতে রাস্তাঘাটে এমনকি বাড়িঘরেও মানুষ ভয়ে থাকেন। তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তার শ্বশুর একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কবি দেলোয়ার হোসেনের পরিবার এখন বাড়িছাড়া। টাকার জন্য মদ্যপ অবস্থায় ওই মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের ওপর নির্যাতন চালালে তিনি প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বখাটে শাহজাহান। একপর্যায়ে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় বাড়িঘর ছেড়ে অনত্র চলে যান। পরে মামলার জেরে ও যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালালে সম্প্রতি থানায় সাধারণ ডায়েরি করে নিজের স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভয়ে পালিয়ে যান ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

পশ্চিম টিলাগাঁও মসজিদ কমিটির সভাপতি হাবীবুর রহমান বলেন, বখাটে শাহজাহানের উৎপাতে অতিষ্ঠ আমরা। রাতের অন্ধকারে নেশাগ্রস্ত হয়ে মানুষের বাড়িঘরে হানা দেয় সে। ঈদের পর রাতের বেলা মসজিদের তালা ভেঙে ব্যাপক ভাঙচুর ও সবকিছু তছনছ করে দেয়। মসজিদের ভেতর প্রস্রাব করে সব বিনষ্ট করে।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সবুজ মিয়া জানান, বখাটে শাহজাহানের অত্যাচারে তার শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেনের পরিবার বাড়িঘর ছেড়েছেন। তার স্ত্রী ও সন্তানরা অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রতি পালিয়ে বেড়াচ্ছে। 

আবদুল মজিদ, জামাল উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, আব্দুর রশিদ ও রাজা মিয়াসহ গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজন বলেন, বখাটে শাহজাহান কোনো কিছুই ভয় করেন না। জেল থেকে বেরিয় আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। গ্রাম পঞ্চায়েতের বিচার-সালিশ উপেক্ষা করে তার পরিবারের প্রভাবশালী লোকদের মদদে তিনি প্রকাশ্যে দা নিয়ে ঘুরে বেড়ান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, বখাটে শাহজাহানের কারণে রাতের বেলা মানুষ নির্ঘুম সময় কাটায়। মদ্যপ অবস্থায় নারীদের ঘরে গিয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে সে। অকথ্য গালিগালাজসহ তার অশ্লীল চিৎকারে গ্রামবাসী আতঙ্কের মাঝে দিনাতিপাত করছেন। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি দেলোয়ার হোসেন কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, বখাটে শাহজাহান আমার মেয়ের ওপর যৌতুকের টাকার জন্য নির্যাতন করতে থাকলে আমি অতিষ্ঠ হয়ে আদালতে দ্বারস্থ হই। প্রাণে রক্ষা পেতে আমার মেয়ে তাকে স্বেচ্ছায় তালাক দিয়ে দেয়। কিন্তু সে জেল থেকে জামিনে বের হয়ে রাতের বেলা আমার বাড়িতে গিয়ে গলায় দা ধরে জোরপূর্বক আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। মামলা করায় আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হমকিসহ প্রকাশ্যে অত্যাচার করতে শুরু করলে আমার পরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে এসেছি। বর্তমানে এলাকাছাড়া হয়ে মসজিদে মসজিদে তাবলীগ করছি। তাকে দমন করার মতো কেউ নেই। কারও কথা সে শোনে না। তার পরিবারের লোকজন তাকে শেল্টার দেয়। আমার মেয়ে তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে দুই সন্তানকে নিয়ে সম্প্রতি নিরুদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছে।

সুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার মামুনুর রশীদ বলেন, শাহজাহান একজন বখাটে। তার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসীসহ আমরা তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছিলাম। কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে আবারও সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মসজিদের ঘটনার পর আমি নিজে ওসি সাহেবকে বলেছি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।

দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজির আলম বলেন, মামলায় বখাটে শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হলেও কিছুদিন পর সে জামিনে মুক্ত হয়ে এসে ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অতিসম্প্রতি গ্রামের মসজিদের তালা ভেঙে মসজিদ তছনছ করার বিষয়টি গ্রাম পঞ্চায়েত অবহিত করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়। সে পালিয়ে বেড়ানোর কারণে তাকে ধরা যাচ্ছে না। তবে দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।   

 

এইচএইচ/আরআর-১৫