শায়েস্তাগঞ্জে আছে উপসর্গ, নেই করোনা পরীক্ষার আগ্রহ

সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, শায়েস্তাগঞ্জ


জুলাই ১৫, ২০২১
০৬:৪০ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৫, ২০২১
০৬:৪০ অপরাহ্ন



শায়েস্তাগঞ্জে আছে উপসর্গ, নেই করোনা পরীক্ষার আগ্রহ

সারা দেশে করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ধারণ করেছে। করোনা প্রতিরোধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। একইভাবে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাতেও মানুষের অসচেতনতায় বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তাছাড়া করোনার লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও সচেতনতার অভাবে অনেকেই করোনা পরীক্ষা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

সাম্প্রতিক সময়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক হারে মানুষ জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। লক্ষণ বেশিরভাগই করোনার। কিন্তু মফস্বলে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই মানুষ ছুটে চলছেন। সাধারণ মানুষ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি, লক্ষণ দেখা দিলেও করাচ্ছেন না নমুনা পরীক্ষা। ঝুঁকি নিয়েই হাটে-মাঠে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা।

সম্প্রতি দেখা গেছে, নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ভিড় করছেন উপজেলার বিভিন্ন ফার্মেসিতে। বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ওষুধ খেয়ে কেউ কেউ সুস্থ হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

অন্যদিকে, উপজেলায় রয়েছে ভালো চিকিৎসকের সংকট। এসব রোগ-ব্যাধি থেকে বাদ পড়ছে না কোমলমতি শিশুরাও। বিশেষ করে ১-৬ বছরের শিশুরা বেশি ভুগছে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে। অবশ্য শিশুদের সুস্থ করে তোলার জন্য সচেতন অভিভাবকরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে শায়েস্তাগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এর মাঝে উপজেলায় হাসপাতাল না থাকায় অনেকেই হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসককে দেখাচ্ছেন, আবার অনেকে শিশুদের সেখানে ভর্তি করছেন। অনেক চিকিৎসক ঢাকা ও সিলেট থেকে শায়েস্তাগঞ্জে এসে প্রাইভেট চেম্বারগুলোতে নিয়মিত রোগী দেখে থাকেন। তবে অনেক রোগী সময়মতো চিকিৎসক দেখাতে না পেরে বিভিন্ন হাতুড়ে ডাক্তার বা ফার্মেসিওয়ালাদের কাছ থেকে ওষুধ কিনে সেবন করছেন।

জ্বর, সর্দি, কাশিসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলেও শায়েস্তাগঞ্জের সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা পরীক্ষা করার কোনো আগ্রহ বা ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। মুন্না আক্তার নামের একজন বলেন, ৪/৫ দিন ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছি। ডাক্তার দেখিয়েছি। এখন বেড রেস্টে আছি।

পলাশ মিয়া নামের একজন জ্বর ও গলা ব্যথাজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে ওষুধ নিয়েছি। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠিনি।

এ রকম শত শত রোগীর ভিড় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ফার্মেসি ও চিকিৎসকের চেম্বারগুলোতে।

ফার্মেসি ব্যবসায়ী মো. রুবেল আহমেদ বলেন, গত এক মাস ধরে প্রচুর মানুষ জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথার ওষুধ নিতে আসছেন। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর থেকেই এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে অনেকগুণ। আমার মনে হয় উপজেলার অনেকেই করোনায় আক্রান্ত আছেন। কিন্তু টেস্ট না করায় তাদের করোনা পজিটিভ বোঝা যায়নি। আমরা ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওষুধ বিক্রি করছি।

উপজেলার পল্লী চিকিৎসক বিষ্ণু বাবু বলেন, লকডাউন না থাকলে এসব রোগীর সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যেত। অনেকেই আসেন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সেবা নিতে। কারও কারও জ্বরের ওষুধ খাওয়ার পর জ্বর কমে যায়। কিন্তু ২/৩ দিন পরে আবার শুরু হয় গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। আমরা নিয়ম মেনে যতটুকু পারি, রোগীদের সেবা দিয়ে আসছি।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সর্বশেষ এক সপ্তাহে প্রায় ১৪০টি নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৫ জন। এর মাঝে সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুইজন মারা গেছেন।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদ্দাম হোসেন বলেন, যদিও আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই, তবুও সকাল থেকে রোগীদের ভিড় থাকে। আমি আজ ৪০-৫০ জন রোগী দেখেছি। এর মাঝে ২০-২৫ জনই সর্দি, জ্বর, কাশিতে ভুগছিলেন। শায়েস্তাগঞ্জ নতুন উপজেলা হওয়ায় এখনও হবিগঞ্জ সদরের সঙ্গেই করোনা রোগীর হিসাব করা হয়ে থাকে। তাই শায়েস্তাগঞ্জে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, মফস্বলে এখনও মানুষ করোনাকে ভয় পায়। টেস্ট করতে চায় না কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে। আমরা বার বার ঘোষণা দিয়েছি- করোনার লক্ষণ দেখা দিলে টেস্ট করুন, সঠিক সেবা নিন। কিন্তু এখনও মানুষের মাঝে অসচেতনতাবোধ কাজ করছে, যা খুবই দুঃখজনক।


এসডি/আরআর-০৫