জমির পর্চা বাণিজ্য, হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি


আগস্ট ২৭, ২০২১
১১:১৫ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৭, ২০২১
১১:১৫ অপরাহ্ন



জমির পর্চা বাণিজ্য, হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে জমির স্বত্বলিপির চূড়ান্ত পর্চা বিতরণের নামে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, নিয়মবহির্ভুতভাবে উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্তৃপক্ষ সুকৌশলে প্রতিটি মৌজার পর্চা বিক্রি করছেন তাদেরই নিযুক্ত দালাল ও অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। মৌজা প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৯৫ এর (৩০ নম্বর বিধি) ১৬৬টি মৌজার সকল আপত্তি মামলাসমূহের স্বত্বলিপির চূড়ান্ত প্রকাশনা শেষ। এখন এসব মৌজার জমির মালিকদের কাছে চূড়ান্ত পর্চা বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পকেট ভারী করছেন সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেএল নম্বর ১২৫ নৈনগাঁও মৌজার ডিপি খতিয়ান ১৬৩২, জেএল নম্বর ৭৮ বালিজুরি মৌজার ২১১৭ ও ২১৯৭ খতিয়ানে টেম্পারিং কাজে ব্যাপক ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অপরদিকে একইভাবে জেএল নম্বর ১২৬ বাজিতপুর মৌজার ৪৮৭ ডিপি খতিয়ানে একক নামে মালিকানা থাকা স্বত্ত্বেও অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আরও দুই মালিকের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া চাঞ্চল্যকর এক তথ্য হলো, চূড়ান্ত পর্চার কাজ সম্পন্ন হওয়া মৌজাগুলোর মধ্যে অন্তত ২০টি মৌজার ৬ হাজার ৬৬৬টি খতিয়ান বাবদ ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা এবং ১ হাজার ২০টি নকশা বাবদ ৫ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে যার কাছে উল্লেখিত টাকার বিনিময়ে ২০টি মৌজার নকশা ও খতিয়ান দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল, তাকে শুধুমাত্র মোহাম্মদপুর, জিনারি ও সুলতানপুর এই ৩টি মৌজার নকশা ও খতিয়ান হস্তান্তর করা হয়। বাকিগুলো সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মচারী অংশু চাকমা, সার্ভেয়ার আবুল কাশেম ও সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের ব্যক্তিগত সহকারী শাহিন মিয়া, পেশকার জীপম চাকমা, কর্মচারী সেলিম ও মোতালেব মিয়া পর্চাপ্রতি জমির মালিকদের কাছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন, যা এখনও চলমান রয়েছে।

উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট মৌজার সংখ্যা ১৬৯টি। তন্মধ্যে নাছিমপুর, বৈঠাখাইসহ ৩টি মৌজার কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০-৬০টি মৌজার চূড়ান্ত পর্চা বিতরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া বাকিগুলোর পর্চা বিতরণের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। 

গত ২৩ ও ২৪ আগস্ট উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের সার্ভেয়ার আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তারই নিযুক্ত দালালচক্রের মাধ্যমে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের উত্তর সাউদেরগাঁও মৌজায় প্রতি পর্চা বাবদ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং প্রতি নকশা বাবদ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা করে জমির মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদকসহ গণমাধ্যমকর্মীরা ২৪ আগস্ট বিতরণের স্থান আমবাড়িগাঁও গ্রামের পুরাতন ব্র্যাক অফিসে উপস্থিত হলে সার্ভেয়ার আবুল কাশেম দালাল সিন্ডিকেট নিয়ে দ্রুত সটকে পড়েন। 

ওই মৌজার ভূমির মালিক সাজিদুর রহমান বলেন, আমাদের কাছ থেকে পর্চাপ্রতি ৪০০ টাকা এবং নকশাপ্রতি ৯০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। 

মান্নারগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিজ বলেন, সাউদেরগাঁও মৌজায় পর্চা বিতরণের বিষয়ে অফিসিয়ালি চিঠি আমরা পেয়েছি। কিন্তু কোথায় পর্চা বিতরণ করা হবে তা জানানো হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করা হয়নি। এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি পর্চাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ করে টাকা দেওয়া হয়েছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (এসও) রফিকুল মিয়া অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নির্ধারিত ফি ব্যতিত অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনাদের দোয়ারাবাজারে ঘরে ঘরে দালাল। শাহীন মিয়া নামের একজনকে চিনি। সে আর দোয়ারাবাজারে যাবে না। দোয়ারাবাজারে গেলে আপনারা তাকে পুলিশে দিয়ে দেবেন।


এইচএইচ/আরআর-১৪