জামালগঞ্জে ভেঙে পড়েছে সেতুর রেলিং, তৈরি হয়েছে গর্ত

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ


আগস্ট ২৯, ২০২১
০৫:১৪ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৯, ২০২১
০৫:২০ অপরাহ্ন



জামালগঞ্জে ভেঙে পড়েছে সেতুর রেলিং, তৈরি হয়েছে গর্ত

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা চৌধুরী বাড়ি সেতু ভয়ঙ্কর মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সেতুর মাঝ অংশ ফুটো হয়ে বৃহৎ আকার ধারণ করায় সম্প্রতি অটোরিকশাচালকদের পক্ষ থেকে বালু, পাথর ও সিমেন্টের জোড়াতালিতে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরক্ষণেই তা ভেঙে পড়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে রডের উপরে কোনোরকমে ব্লক ফেলে রাখা হয়েছে। তাতে ভারী কোনো গাড়ি উঠলেই চাকা দেবে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া দুই প্রবেশমুখসহ মাঝ অংশের রেলিংও ভেঙে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি।

বিপজ্জনক চৌধুরী বাড়ি সেতু নিয়ে গত বছরের অক্টোবরে দৈনিক সিলেট মিরর পত্রিকায় বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। তখন উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তারের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি প্রথম শুনেছেন এ সেতুতে সমস্যা আছে। এর আগে এ বিষয়টি কেউ তাকে জানায়নি। সে সময় সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিবেদন প্রকাশের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও ভঙ্গুর সেতুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। চরম ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতুটির প্রতি কোনো নজরদারি না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

সাচনা বাজার থেকে বেহেলীগামী চৌধুরী বাড়ি সেতুতে চলাচল করতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় বছর দুয়েক ধরে বেহাল দশায় পতিত হয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি। ভেঙ্গে পড়েছে এর দুইপাশের নিরাপত্তা বেষ্টনী (রেলিং)। চৌধুরী বাড়িতে অংশের প্রবেশমুখ সংলগ্ন সেতুর মাঝ বরাবর গর্ত হয়ে কুয়াসদৃশ রূপ ধারণ করেছে। বেরিয়ে এসেছে লোহার রড। অসাবধানতাবশতঃ গর্ত হওয়া স্থানে কারও পা কিংবা চাকা ঢুকে পড়লে নিশ্চিত বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। এমনকি চলাচলের নিরাপদ ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত রেলিং ভেঙে পড়ায় যে কোনো সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে প্রাণ বিলীনের সম্ভাবনাও প্রবল হয়ে উঠেছে। তাই সেতুটি দ্রুত মেরামত ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, উপজেলার বেহেলী, জামালগঞ্জ উত্তর ও সাচনা বাজার ইউনিয়নসহ তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ৭০-৮০টি গ্রামের প্রায় লাখখানেক মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম সাচনা চৌধুরী বাড়ি সেতু। সাচনা বাজার থেকে বেহেলীগামী সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত টমটম, ট্রলি, অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল ইত্যাদি চলাচল করছে। সেতুটি অত্যন্ত সরু হওয়ায় একটি রিকশা কোনোরকমে তাতে চলতে পারে। একটি যান উঠলে আরেকটি সেতুর অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকে। যাতায়াতে গুরুত্বপূর্ণ বিপজ্জনক এ সেতু কারও তরতাজা প্রাণ কেড়ে নিলে হয়তো কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে- এমনটি জানিয়েছেন পথচারীরা।

এলাকাবাসী সূত্রে আরও জানা যায়, প্রায় দুই দশক আগে সাচনা বাজারের হোমিও চিকিৎসক ডা. জি আর রায় আগের এই পুরোনো সেতু পার হতে গিয়ে মোটরসাইকেলসহ নিচে পড়ে নিহত হয়েছিলেন। এরপর বিএনপি জোট সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধান ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাহায্য সংস্থার অর্থায়নে পুরাতন সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কোনোরকমে নির্মিত এ সেতুটি ১৬-১৭ বছর যেতে না যেতেই আবার মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। নির্বিঘ্নে যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা সরু এ সেতুটি ভেঙে প্রশস্ত করে পুনঃনির্মাণের জোর দাবি উঠেছে।

স্থানীয় রিকশাচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সেতুর এই ভাঙাটা ছোট থেকে অনেক বড় হয়েছে। পাশের রেলিংও ভেঙে গেছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। কারণ এটা তো ছোটখাটো কাজ। এটা করলে তো পয়সা খাওয়া যাবে না। তাই এর গুরুত্ব কম। এখানে পড়ে মানুষ মরলে কারও কিছু আসে যায় না।

সেতু সংলগ্ন মন্দিরে নিয়মিত আসা-যাওয়া করা লোকনাথ সেবা সংঘের সভাপতি সজীব বণিক বলেন, চৌধুরী বাড়ি সেতু দিয়ে শুধু এখানকার মানুষই নয়, পার্শ্ববর্তী উপজেলার মানুষও যাতায়াত করেন। এছাড়া সেতু থেকে নেমেই ৫টি মন্দিরের অবস্থান। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর মাঝে যে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে। স্কুলগামী শিশু-কিশোররা হঠাৎ দুষ্টুমির ছলে গর্তে পড়ে গিয়ে নিশ্চিত বিপদের সম্মুখীন হবে। জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামত করার দাবি জানাচ্ছি।

সাচনা চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা অর্ধেন্দু ঘোষ চৌধুরী (সঞ্জু) জানিয়েছেন, আগের পুরোনো সেতুটি পাকিস্তান আমলে (সম্ভবত ১৯৬৬-৬৭ সালে) রামপুর গ্রামের আব্দুস সত্তারের তদারকিতে নির্মিত হয়েছিল। তখন সড়ক থেকে দুইপাশে থাকা বাঁশের চাটাই হয়ে মাঝের সেতুতে উঠতে হতো। পরবর্তীতে সেটি ভেঙে বর্তমান জরাজীর্ণ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এখন এটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চলাচলের ঝুঁকি এড়াতে সাময়িক সংস্কার করে এখানে একটি প্রশস্ত দীর্ঘস্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার বলেন, এ অঞ্চল দিয়ে আমাদের লোকজন প্রায়ই আসা-যাওয়া করে। আমরা জানি এখানে ছোট্ট একটি ছিদ্র আছে। আপনারা কি চান আমরা এখানে টাকা ইনভেস্ট করি, যে ইনভেস্টটা বেড ইনভেস্ট হোক? এই সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু আমাদের ধরা আছে। যার কারণে ছোটখাটো কাজগুলো আমরা এই মুহূর্তে করছি না। আর গর্তটি যদি ভয়ঙ্করই হয়, তাহলে এডিপি থেকে আমরা ঠিক করে দেব।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, চৌধুরী বাড়ি সেতুটি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভঙ্গুর সেতুটি মেরামত করে আপাতত নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার। কারণ এ সেতু দিয়ে দুই-তিন উপজেলার মানুষ চলাচল করেন। অচিরেই সেতুটি মেরামতের কাজ শুরু হবে।


বিআর/আরআর-০১