শান্তির আশ্বাসে ডেকে এনে ১২৬ জনকে হত্যা

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি


আগস্ট ৩১, ২০২১
০৮:২২ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ৩১, ২০২১
১১:০৮ অপরাহ্ন



শান্তির আশ্বাসে ডেকে এনে ১২৬ জনকে হত্যা
আজ শ্রীরামসি গণহত্যা দিবস

আজ ৩১ আগস্ট সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের শ্রীরামসি গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকবাহিনী শ্রীরামসি গ্রামে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে গ্রামের সহজ-সরল শান্তিপ্রিয় ১২৬ জন মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে শ্রীরামসি গ্রামবাসী দিনটি শহীদদের স্মরণে আঞ্চলিক শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।

ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩১ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে পাক হানাদারবাহিনী ৭/৮টি নৌকাযোগে শ্রীরামসি বাজারে আসে এবং স্থানীয় রাজাকারদের দিয়ে গ্রামবাসীকে খবর দেয়, শ্রীরামসি হাইস্কুল মাঠে শান্তি কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে এবং ওই সভায় সবাইকে উপস্থিত থাকতে হবে। শান্তির আশায় গ্রামের লোকজন সেদিন স্কুলের মাঠে সমবেত হন। যারা আসতে দেরি করেন, তাদেরকেও ডেকে আনা হয়। এরপর পাকসেনারা ১০/১২ জন করে বিদ্যালয়ের কক্ষে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র, শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, যুবক, সাধারণ গ্রামবাসী ও বেড়াতে আসা স্বজন। নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই পাকসেনারা শ্রীরামসি গ্রামে ঢুকে প্রায় ২৫০টি ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেলে দাফনের অভাবে লাশগুলো কুকুর-শেয়াল টানাহেঁচড়া করে। ঘটনার ৪/৫ দিন পর কয়েকজন লোক গ্রামে ফিরে লাশগুলো একটি গর্তে পুঁতে রাখেন।

সেদিন পাক হানাদারবাহিনী ১২৬ জন লোককে এমন নির্মমভাবে হত্যা করে। নরপশুরা সেদিন তাদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা শ্রীরামসি বাজারে গিয়ে কেরোসিন ছিটিয়ে সবকটি দোকানঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এর পরেও হানাদাররা শ্রীরামসি গ্রামে আক্রমণ চালায়। ততক্ষণে জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে সমস্ত গ্রাম। হানাদাররা ঘর-বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে বর্বরতার চরম উদাহরণ রাখে। এভাবেই সেদিন সংঘটিত হয় ইতিহাসের অন্যতম বর্বর হত্যাকাণ্ড। প্রতিবছর গ্রামের লোকজন এ দিনটিকে পালন করেন আঞ্চলিক শোক দিবস হিসেবে। 

শ্রীরামসি শহীদ স্মৃতি সংসদের সভাপতি মুহিবুর রহমান জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়েছে। 

জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ জানান, সিলেট বিভাগের মধ্যে শ্রীরামসি গণহত্যা অন্যতম। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদদের স্মরণে আজ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির জন্য এবার সংক্ষিতভাবে দিবসটি পালন করা হয়।


এএ/আরআর-০৪