সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ
সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১
১২:০১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১
০৫:৩০ পূর্বাহ্ন
দেড় বছর পর অবশেষে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণায় পাঠদানের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে সুনামগঞ্জের সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। আবারও শিশু-কিশোরদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, পাঠদান, পরীক্ষা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় শিক্ষাঙ্গনে আবারও ফিরবে প্রাণের স্পন্দন।
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এজন্য বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ সাজাতে হবে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে। ৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী এবং ৫ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসে ক্লাস করতে পারবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢোকার আগেই তাপমাত্রা পরীক্ষা করা ও সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, বিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় তারাও মানসিকভাবে ভালো নেই। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও সবার সঙ্গে দেখা হয় না। তাই বিদ্যালয় খোলার ঘোষণায় আনন্দিত তারা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নতুন করে আসবে, নতুন করে সাজবে, শিখন ও শেখানোর মধ্য দিয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে প্রিয় প্রতিষ্ঠানে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৩৩টি। প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৪৭৫টি। সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যালয় আঙিনা পরিষ্কার করা, বসার আসন জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা, শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ও মাস্ক কেনার কাজ সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফয়েজুর রহমান বলেন, চার-পাঁচ মাস আগে আমাদের সকল প্রস্তুতি শেষ করতে বলা হয়েছিল। তখন থেকেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম। শ্রমিক দিয়ে বিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার, জীবাণুনাশক দিয়ে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করে রেখেছি। তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ও মাস্ক কিনে রেখেছি। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার জায়গা নির্ধারণ করে রেখেছি।
তিনি আরও বলেন, এতদিন যেরকম জীবনযাপন করেছি সেটা আর ভালো লাগছে না। কতদিন হলো শিক্ষার্থীদের মুখ দেখি না। বিদ্যালয় খুলছে শোনার পর আমরা খুবই খুশি হয়েছি। আশা করি আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠানে আবারও শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরবে।
তাহিরপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয় খুলছে এটা খুবই আনন্দের বিষয়। প্রায় দেড় বছরের মতো বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। যার কারণে বিদ্যালয়ের আঙিনা, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক থাকলেও এর মূল উপাদান শিক্ষার্থীরাই অনুপস্থিত ছিল। এবার শিক্ষার্থীরা নতুন করে আসবে, নতুন করে সাজবে। শিখন ও শেখানোর মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। এতে মুখরিত হয়ে উঠবে প্রিয় ক্যাম্পাস। এই মুহূর্তে এই স্বপ্নটা আমরা দেখছি। এজন্য আমাদের বিদ্যালয়ের আঙিনা, শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কারসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে, বিদ্যালয় খোলার খবরে আনন্দ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সরকারি বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
সৃজন বিদ্যাপীঠের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরমান আহমদ প্রিন্স। ঘরে বসে বিদ্যালয়ের দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট করেছে এতদিন। বিদ্যালয়ের আঙিনায় বন্ধুদের সঙ্গে হই-হুল্লোড়, আনন্দ করার সুযোগ ছিল না। এতদিন পর বিদ্যালয় খুলে যাওয়ার খবর শুনে খুশি সে। প্রিন্স জানায়, বিদ্যালয় খোলার খবর শুনে ভালো লাগছে তার। আগের মতো সাদা আর লাল রঙের ইউনিফর্ম পরে বিদ্যালয়ে যাবে সে। বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করবে।
গুলেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার দাস বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেমন ক্লাসে ফিরতে চায়, সেরকম আমরাও ক্লাসে ফিরতে উদগ্রীব হয়ে আছি।
সুনামগঞ্জের সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খলিল রহমান বলেন, দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম এত লম্বা সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। টানা ১৯ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যালয় খোলার পর ঝরে পড়ার হার কেমন সেটা বোঝা যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ে বেড়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতিও বিপুল। বেসরকারি বহু শিক্ষক পরিবার পথে বসে গেছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। শহরের অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যেন মানা হয়, সেদিকে নজর রাখার দাবি জানাই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বিদ্যালয় খোলার পরেও যেন সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানেন সে বিষয়টি দেখভাল করার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলে দেওয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বললেন, আমাদের অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। এখন আবারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন।
এ এম/আরআর-০৯