খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বস্তিতে শায়েস্তাগঞ্জের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, শায়েস্তাগঞ্জ


সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
০৬:২২ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
১০:২৫ অপরাহ্ন



খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বস্তিতে শায়েস্তাগঞ্জের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

'১২ সেপ্টেম্বর আমাদের স্কুল খুলবে শুনে আমি খুব খুশি। অনেকদিন পর আবার স্কুলে যেতে পারব, ক্লাস করতে পারব। আমাদের পড়ালেখাও ভালো হবে। স্কুল খুলে দেওয়ায় আমি আনন্দিত।' কথাগুলো বলছিল হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শাহজীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার। করোনার দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে অবশেষে বিদ্যালয়ে ফেরার সুযোগ তৈরি হওয়ার খবরে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে এমন অনুভূতি জানাচ্ছিল সে।  

করোনাভাইরাসের কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আগামীকাল ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিবাবকরা। এদিকে, খোলার আগমূহূর্তে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম।

গত বুধবার সকালে শাহজীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষের ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চ এবং কক্ষের দেয়ালে জমে থাকা মাকড়সার জাল অপসারণ করা হচ্ছে। স্কুলে প্রবেশ করার বারান্দায় রাখা হয়েছে হাত ধোয়ার বেসিন ও সাবান। ভবনের দ্বিতীয় তলায়ও আরও দুটি বেসিন বসানো হয়েছে। জীবাণুনাশক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বেঞ্চগুলোতে, যেন সংক্রমণ ছড়াতে না পারে।

উপজেলার নুরপুর আর্দশ উচ্চবিদ্যালয়, মোজাহের হাইস্কুল, হাজী আফরাজ আলী হাইস্কুল আর শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ঘুরে দেখা যায়, সবগুলো স্কুলেই চলছে পাঠদান শুরুর প্রস্তুতি।

হাজী আফরাজ আলী হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দা ইসরাত জাহান নৌরিন বলে, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা পড়াশোনা নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিলাম। এখন অনেকদিন পর আমাদের স্কুল খুলবে জেনে আমরা অনেক আনন্দিত। আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। সবাই আবারও এক সঙ্গে ক্লাস করতে পারব। স্কুল খুলে দেওয়ায় আমাদের অভিভাবকরাও বেশ উৎফুল্ল।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা অভিভাবক সৈয়দ এনামুল হক জানান, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের মনোযোগ বাড়াতে শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে হবে। করোনার প্রভাবে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। শিক্ষকদের উচিত অভিভাবক সমাবেশ করে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের আবার পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনতে উৎসাহ দেওয়া।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সম্পর্কে শাহজীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইয়াসমিন আরা বেগম বলেন, শিক্ষামন্ত্রী আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ঘোষণার পর আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে বিভিন্ন নির্দেশনা পেয়েছি। এ নির্দেশনার আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি চলছে। খোলার আগ মুহূর্তে আমরা শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পঞ্চম শ্রেণির দুটি করে ক্লাস প্রতিদিন নেব। যেহেতু তাদের পিএসসি পরীক্ষা দিতে হবে। আর ১ম শ্রেণি থেকে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত  সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস নেওয়া হবে। প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে দুই ক্লাসে বসানো হবে এবং শিক্ষার্থীদের উন্নতমানের মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য থাকছে থার্মোমিটার।

তিনি আরও জানান, গত ২৩ আগস্ট থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সশরীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অফিস করতে বলা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওয়ার্ক শিট বিতরণ করেছি। সকল শিক্ষার্থীকে গুগল মিটের মাধ্যমে ক্লাস দেওয়া হয়েছে। যদিও শতভাগ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেনি, তবে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ বেশি ছিল।

হাজী চান মিয়া একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. নাজিম খান জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ করানো হবে। প্রতিটি বেঞ্চ ফাঁকা রেখে আমরা শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রম পরিচালনা করব।

শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামি একাডেমির সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুর রকিব বলেন, আমাদের স্কুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ পুরোদমে চলছে। আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) আমরা নতুন নিয়মে ক্লাসের রুটিন হাতে পাব। এরপর তা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেব। 

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা উপজেলার সবগুলো স্কুল ভিজিট করেছি এবং সবগুলো স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করানো হবে। আমাদের সঙ্গে ডিভিশনাল ডেপুটি ডিরেক্টর মুসলিম উদ্দিনও বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করেছেন। উপজেলার সবগুলো স্কুলই খোলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছি। স্কুলগুলো সে নির্দেশনা মানছে কি না আমরা তা নজরদারিতে রাখছি।


এসডি/আরআর-০২