আজ সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী

শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
০৩:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
০৭:০০ অপরাহ্ন



আজ সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী

আজ বৃহত্তর সিলেটের কনিষ্ঠতম মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস শহীদের ২য় মৃত্যু বার্ষিকী। যাদের  কারণে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নামক আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জন্ম হয়েছে তাদের একজন ও বৃহত্তর সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস শহীদ।

২০১৯ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নেন দেশের এই বীর সন্তান। রাষ্ট্রীয় মর্যাদার মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাকে বিদায় জানায়।  হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের কোর্টআন্দরে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার কোর্টআন্দর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল হান্নান ও মনোয়ারা বেগম দম্পতির পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মো. আব্দুস শহীদ। ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী, সাহসী ও চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন। বাবা মায়ের বড় সন্তান ছিলেন বলে তাকে নিয়ে খুব চিন্তাও ছিল তার বাবা মায়ের। ছোট বেলায় বেশ কয়েকবার পালিয়ে তিনি তার ফুফুর বাড়ি বেড়াতে যান।

১৯৭১ইং সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ মুক্তিযোদ্ধা শহীদকে অনেক অনুপ্রাণিত করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। মাত্র ১৪ বছর বয়সে দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তার মামার সাথে হবিগঞ্জ ট্রেজারি অফিসে যান। তার মামা ছিলেন স্কুল শিক্ষক, তার মামা হবিগঞ্জে গিয়েছিলেন চেক দিয়ে বেতন উঠাতে ট্রেজারি অফিস থেকে। সেখান থেকে মামার চোখ ফাঁ কি দিয়ে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন শহীদ। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অম্পিনগরে দীর্ঘ এক মাস ট্রেনিং শেষে খোয়াই ৩নং সেক্টর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তাঁর সহযোদ্ধাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন বলে তাঁকে সবাই ছোট শহীদ বলে ডাকতেন।

যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি রেকি (তথ্য সংগ্রহ) করতেন। যুদ্ধের সময় তিনি অনেক জায়গায় রেকি করে বা তথ্য সংগ্রহ করে তার গ্রুপ কমান্ডরকে দিতেন। একদিন রেকি করতে যাওয়ার পর রোজার ঈদের তিনদিন আগে পাকিস্তান রেলওয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস শহীদসহ সঙ্গে থাকা আরও চারজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাকবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল।

ধরিয়ে দেওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনি একমাত্র ব্যাক্তি বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন। বাকী চারজনকে ওই রাতেই মেরে ফেলেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। শুধু তাঁর বয়স কম থাকার কারণে তাঁকে ছেড়ে দেয় তারা। কিন্তু সেই রাতে তাঁকে পাকিস্তানী বাহিনীরা প্রচণ্ড নির্যাতন করে। যার ফলে তিনি ডান কানে কিছুই শুনতে পেতেন না। তাছাড়া তাঁর সম্পূর্ণ দাঁত নড়ে যায় এবং অসময়েই তা পড়ে যায়।

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে কালেঙ্গায় ‘এন্টি ট্যাঙ্ক মাইন’ লাগিয়ে পাকিস্তানী মেজর ইউসুফ খাঁনকে হত্যার মাধ্যমে পুরস্কৃত হন তিনি।  দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর সাব-সেক্টর কমান্ডার এজাজ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে হবিগঞ্জ পি টি আই স্কুলে অবস্থান করেন, এবং হবিগঞ্জের পোদ্দার বাড়ি সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন এজাজ আহমেদ চৌধুরীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিন নিয়োজিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ঢাকার ধানমন্ডি ভূতের গলিতে ১৯৫৭ সালের ২ জুন জন্মগ্রহন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস শহীদ।

এস ডি/বি এন-০২