বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১
১০:৪১ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১
১০:৪১ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রি ফি'র কারণে মারাত্মক বেকায়দায় পড়েছেন প্রায় ৩৫টি গ্রামের মানুষ। মাত্রাতিরিক্ত ফি'র কারণে জায়গা-জমি বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে উপজেলার এই ৫ মৌজাধীন এলাকায়। এসব স্থানে বিক্রির দর থেকে রেজিস্ট্রি ফি কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় কেউ জমি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এতে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারসহ জরুরি চিকিৎসা, ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ও আনুষাঙ্গিক বিশেষ ব্যয় বহনে অক্ষম পরিবারগুলো। এ পরিস্থিতিতে একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়তি ফি'র কারণে জমি বিক্রি করতে না পারা মানুষের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মানুষজন।
গত ২১ আগস্ট অতিরিক্ত রেজিস্ট্রি ফি সংশোধনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। সাচনা (চৌধুরী বাড়ি) গ্রামের অর্ধেন্দু ঘোষ চৌধুরী সঞ্জু স্বাক্ষরিত ওই আবেদনে সুপারিশ করেছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। এছাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির স্বাক্ষরও তাতে রয়েছে। এ আবেদনের মাধ্যমে সবাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
আবেদন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাচনা, কামলাবাজ, পলক, জামালগড় ও তেলিয়া জামালপুরসহ ৫টি মৌজায় অতিরিক্ত রেজিস্ট্রি ফি নেওয়া হচ্ছে। এতে বিভিন্নভাবে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন একফসলী এলাকার কৃষিজীবী অনেক পরিবার। যেখানে সাচনা মৌজায় ১ শতক বোরো জমির বিক্রয়মূল্য ৫-৬ হাজার টাকা, সেখানে ফি দিতে হয় ১৪ হাজার ৭৭৯ টাকা। এভাবে কামালবাজ মৌজায় ১ শতক বোরো জমির বিক্রয়মূল্য ৬-৭ হাজার টাকার বিপরীতে ৫৫ হাজার ৭৮৮ টাকা, পলক মৌজার ১ শতক বোরো জমির বিক্রয়মূল্য ৬-৭ হাজার টাকার বিপরীতে ১৫ হাজার ৭৬৭ টাকা, তেলিয়া জামালপুর মৌজার ১ শতক বোরো জমির বিক্রয়মূল্য ৫-৬ হাজার টাকার বিপরীতে ৫৫ হাজার ৪৬৭ টাকা এবং জামালগড় মৌজায় ১ শতক বোরো জমির মূল্য ৬-৭ হাজার টাকার বিপরীতে রেজিস্ট্রি ফি গুণতে হয় ৩৩ হাজার ৯০৮ টাকা। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মাঝে অস্বস্তি কাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, সাচনা মৌজার সাচনা, কালী বাড়ি, আলীপুর, রামপুর (একাংশ) ও শরীফপুর, কামলাবাজ মৌজার দক্ষিণ কামলাবাজ, গুলের হাঁটি, শরৎপুর ও সাচনা বাজারের পশ্চিম অংশ, পলক মৌজার পলক, সাচনা বাজার, মফিজনগর, ফতেপুর ও কুকড়াপশি (একাংশ), জামালগড় মৌজার নয়াহালট, তেলিয়া, শাহপুর, উত্তর কামলাবাজ, ছেলাইয়া, মানিগাঁও, চানপুর ও সোনাপুর এবং জামালপুর মৌজার নয়াহালট, উত্তর কামলাবাজ, সোনাপুর, চানপুর, কদমতলী, তেলিয়া (একাংশ), সদরকান্দি ও কামিনীপুরসহ প্রায় ৩৫টি গ্রামের অন্তত ২০-২৫ হাজার পরিবার আছে যারা জরুরি প্রয়োজনে জায়গা-জমি বিক্রি করতে পারছে না।
কামলাবাজ মৌজার উত্তর কামলাবাজ গ্রামের শাহজাহান সিরাজ বলেন, জামালগঞ্জ সদরে জায়গার যে রেজিস্ট্রি ফি, সদর থেকে দূরবর্তী হালি হাওরপাড়স্থ কামলাবাজ মৌজার রেজিস্ট্রি ফিও প্রায় তা-ই। এ মৌজায় যে কয়েকটি গ্রাম আছে সেগুলো অনেক বড়। একেকটি গ্রামে দুইটি করে ওয়ার্ড রয়েছে। এছাড়া উপজেলার বৃহৎ হালি হাওরের একাংশও এ মৌজার অন্তর্ভুক্ত। হঠাৎ কেউ গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়ে জমি-জমা বিক্রি করতে চাইলে তা সম্ভব হচ্ছে না অধিক রেজিস্ট্রি ফি'র কারণে। তাই জরুরিভিত্তিতে তা সংশোধন করা প্রয়োজন।
পলক মৌজাধীন সাচনা বাজার দক্ষিণ অংশের বাসিন্দা আলী আক্কাছ মুরাদ বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমিসহ অনেকে অনেক জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে বিয়ে-শাদির ব্যাপারটিতে অনেকে নিজের জায়গা থাকা সত্ত্বেও শুভ কাজ সম্পন্নে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া জীবনে হঠাৎ এমন সময় আসে, তখন জমি বিক্রি ছাড়া কারও কোনো উপায় থাকে না। রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির দ্রুত সুরাহা হোক।
সাচনা চৌধুরী বাড়ির অর্ধেন্দু ঘোষ চৌধুরী সঞ্জু বলেন, এখানকার মানুষ এক ফসলের ওপর নির্ভরশীল। বলতে গেলে কৃষিই তাদের প্রধান পেশা। এর মাঝে কখন যে কোন বিপদ এসে ভর করে তা বলা যায় না। এ বিপদটি হতে পারে বিয়ে কিংবা অসুখ-বিসুখ সংক্রান্ত। কেউ না কেউ প্রতিনিয়ত এমন বিপদের মুখোমুখি হচ্ছেন। তখন অনেক মানুষই ভূ-সম্পত্তি বিক্রি করতে হন্যে হয়ে এখানে-সেখানে ছোটেন। কিন্তু অত্যধিক রেজিস্ট্রি ফি'র কারণে কেউ জমি কেনায় এগিয়ে আসেন না। ফলে বিপদমুখী মানুষটি চোখে সরষে ফুল দেখেন। এ সমস্যা থেকে উত্তরণ না হলে এখানকার বিপদগ্রস্ত মানুষ দিন দিন আরও সমস্যার সম্মুখীন হবেন।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে যে কেউ সাব-রেজিস্ট্রার বরাবরে আবেদন করতে পারেন। তখন সাব-রেজিস্ট্রার সেই আবেদন জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠাবেন। জেলা রেজিস্ট্রার তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি সরেজমিনে যাচাইয়ের জন্য কমিটি করে দেবেন। উক্ত কমিটি যাচাই শেষে প্রতিবেদন জমা দিলে কর্তৃপক্ষ জমি রেজিস্ট্রি ফি পুনঃনির্ধারণ করতে পারেন।
বিআর/আরআর-০১