সোহেল তালুকদার, শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
০১:০১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
০১:৩৬ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নে বাগেরকোণা-সলফ সড়ক মহাসিং নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে পাকা সড়ক দিয়ে চলাচল করা ৯ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। সড়ক ভেঙে এখন বিভিন্ন মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে।
তবে, নদীভাঙন রোধ ও সড়ক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের কোনো পরিকল্পনা নেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীভাঙন রোধে বিভিন্ন প্রকল্প চলমান থাকলেও শান্তিগঞ্জের মহাসিং নদীর ভাঙন রোধে তাদের প্রকল্প নেই। পরিকল্পনামন্ত্রী উদ্যোগ নিলে এটি করা যেতে পারে। আর এলজিইডি বলছে, নদীভাঙন এলাকায় সড়ক সংস্কার বা নির্মাণের সুযোগ নেই।
জানা গেছে, এ সড়ক দিয়ে দরগাপাশা ও পূর্ব বীরগাঁও দুইটি ইউনিয়নের বাগেরকোনা, মৌগাঁও, লালপুর, সলফ, ধরমপুর, বাবনগাঁও, লাউগাং, নগদিপুর, কাউয়াজুরিসহ ৯ টি গ্রামের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এক বছর ধরে মহাসিং নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় সড়কের প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে।
এখন সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এলাকার মানুষজন পায়ে হেটেই পাড়ি দিচ্ছেন ৬ কিলোমিটার রাস্তা। নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে অনেক ঘরবাড়ি। নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে এইসব ঘর বাড়িও কয়েকদিনের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে।
সরেজমিন দেখা যায়, বাগেরকোনা গ্রামের খালিক মিয়া, সাদিক মিয়া, শাহিন মিয়া, সিদ্দেক মিয়ার বাড়ি উত্তর পাশে মহাসিং নদীর ভাঙনে পুরোপুরিভাবে বিলীন হয়েছে। এখন তাদের বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়ে যাচ্ছে।
একইসঙ্গে ওই গ্রামের আব্দুস শহিদ ও শফিক মিয়ার বাড়ির সামনের পুরো সড়কটি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখানে রাস্তার তিনটি অংশে ভাঙনে প্রায় ৪০০ মিটার জায়গা নদীগর্ভে। সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দিনে অথবা রাতে রোগীদের নিয়ে যাতায়াত সম্ভব হয় না। বয়োবৃদ্ধ, শিশুদের নিয়ে প্রায় ৪ থেকে ৬ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার লোকজনকে।
বাগেরকোনা গ্রামের ভাঙন এলাকার খালিক মিয়া জানান, মহাসিং নদীর ভাঙনে এক বছর ধরে অনেক জায়গা নদীতে বিলীন হয়েছে। ৪-৫ মাসে তার বাড়ির পাশের সড়কটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। বাড়িতেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তারা ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবেন। খালিক মিয়া সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
ভাঙন এলাকার আব্দুস শহিদ ও শফিক মিয়া জানান, একবছর ধরে ভাঙন চলতে থাকলেও সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সড়কের একটি বড় অংশ নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। বাড়িঘর ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদী তাদের ঘরবাড়িও গিলে খাবে।
সলফ গ্রামের আব্দুল গফফার বলেন, ‘এ রাস্তার ব্যাপারে আমরা কয়েকবার এলজিইডি অফিসে যোগাযোগ করেছি। আবেদন করেছি এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে অবগত করেছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই রাস্তার নদী ভাঙন অংশে সংস্কারকাজ শুরু করা প্রয়োজন। না হয় দিন দিন আরও দুর্ভোগে পড়বে এলাকাবাসী।’
দরগাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের বাগেরকোণা-সলফ সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তা নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডে উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। উপজেলা থেকে গত কয়েক মাস পূর্বে কিছু বাঁশ-বস্তা দেওয়া হয়েছিল এগুলো লাগানো হয়েছে। কিন্তু, ভাঙনরোধে বড় প্রকল্প প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউনিয়নের দরাধরপুর গ্রামেরও গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে সহাসিং নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অনেক কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। কিন্তু কোনো কাজ করেননি। এখন এই গ্রামের অনেকের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই বিটে-মাটি ছেড়ে চলে গেছেন।’
শান্তিগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আল নুর তারেক জানান, বাগেরকোনা-সলফ সড়কের বড় একটি অংশ মহাসিং নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন তারা। এখন নদী ভাঙন রোধ করা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ। নদী ভাঙন এলাকা দিয়ে রাস্তা তৈরি বা মেরামত করাও সম্ভব নয়। এলাকার জনগণ যদি রাস্তার জায়গা অন্যদিকে দেন তাহলে প্রাক্কলন তৈরি করে রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ জেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, ‘নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ব্যাপক ভাঙনের বিষয়ে এলজিইডির কিছু করার নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রকল্প নিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করতে হবে অথবা বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করতে হবে।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর ভাঙন রোধে আমাদের অনেক প্রকল্প চলমান আছে। কিন্তু, শান্তিগঞ্জ উপজেলার মহাসিং নদী ভাঙনরোধে কোনো প্রকল্প আমরা নিতে পারিনি।’ তবে পরিকল্পনামন্ত্রীর ডিও লেটার (আদাসরকারি পত্র) পেলে তারা প্রকল্প নিতে পারবেন বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
বিএ-০৬