নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ১৯, ২০২১
০৪:১০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ১৯, ২০২১
০৪:১০ পূর্বাহ্ন
হাওরে ঘেরা সুনামগঞ্জ জেলা। যোগাযোগ ব্যবস্থায় পিছিয়ে থাকা এক জনপদ। বর্ষাকালে নৌকা আর হেমন্তকালে পায়ে হাটা ছাড়া কোনো উপায় নেই। পাশের জেলা নেত্রকোনার সঙ্গে নেই সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। বর্ষায় হাওর যখন প্রাণ পায়, তখন সুনামগঞ্জের এক উপজেলার সঙ্গে আরেক উপজেলাও হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। সড়ক না থাকায় প্রসূতিসহ নানা রোগব্যাধিতে মেলে না মানুষের জরুরি চিকিৎসাসেবা। শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয় সড়কের অভাবে। অবশেষে হাওরাঞ্চলে যোগাযোগ স্থাপনে হচ্ছে উড়াল সড়ক। আগামী মাসেই এ প্রকল্প একনেকে উঠছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেছেন, ‘সুনামগঞ্জে হাওরের বুকে প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল সড়ক প্রকল্প পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগিরই এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হবে। এরপর কিছুদিনের মধ্যে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে হাওরের বুকে শুরু হবে কর্মযজ্ঞ।’
তিনি গত শনিবার বেলা ৩টায় দৈনিক সিলেট মিরর কার্যালয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর নামানুসারে সড়কটি ‘শেখ হাসিনা উড়াল সড়ক’ নামকরণ হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
সম্ভাব্য ব্যয় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নভেম্বরে কপ-২৬ সম্মেলনে যাচ্ছেন। এর মধ্যে একনেক সভা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি দেশে ফেরার পর একনেক সভায় এই প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে।’
প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা মহাসড়কের মান্নানঘাট থেকে গুল্লাগ্রাম হয়ে ধর্মপাশার মধুপুর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার স্থানে গভীর হাওরে উড়াল সেতুসহ রাস্তা নির্মাণ এবং দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অল্পসময়ে সুনামগঞ্জ থেকে নেত্রকোনা হয়ে ঢাকায় যাতায়াত সম্ভব হবে। একইসঙ্গে হাওরকেন্দ্রিক পর্যটনের বিকাশ ঘটবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় হাওর এলাকায় ১৯০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তারমধ্যে অল সিজন সড়ক (বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা সড়ক, যা সব মৌসুমে ব্যবহার করা যাবে) ১২৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার, সাবমারজিবল সড়ক (বর্ষায় তলিয়ে যাবে) ৫১ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং উড়াল সড়ক (যার নিচ দিয়ে পানি চলাচল করতে পারবে) ১৩ দশমিক ৪১ কিলোমিটার।
প্রকল্প সূত্রে আরও জানা যায়, ১৯০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে উপজেলা অল সিজন সড়ক ১০৬ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার, উপজেলা সাবমারজিবল সড়ক ২৮ দশমিক ২১ কিলোমিটার, ইউনিয়ন অল সিজন সড়ক ১৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার, ইউনিয়ন সাবমারজিবল সড়ক ১৪ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার, গ্রাম সাবমারজিবল সড়ক ৮ দশমিক ১৭ কিলোমিটার এবং উপজেলা এলিভেটেড (উড়াল) সড়ক ১৩ দশমিক ৪১ কিলোমিটার। পাশাপাশি উপজেলা সড়কে ২ হাজার ৯৮৭ মিটার ব্রিজ, ইউনিয়ন সড়কে ৬৮৫ মিটার ব্রিজ, উপজেলা সড়কে ৬৬৭ মিটার কালভার্ট, ইউনিয়ন সড়কে ৭৫ মিটার কালভার্ট এবং গ্রাম সড়কে ৩৩ মিটার কালভার্ট নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্য মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
শুধু তাই নয়, ময়মনসিংহের সঙ্গে সিলেটের সরাসরি রেলযোগাযোগ স্থাপনেও কাজ চলছে। এ জন্য জরিপ কার্যক্রম চলছে বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। এছাড়া সুনামগঞ্জের রানীগঞ্জে একটি সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এটি সম্পন্ন হলে সুনামগঞ্জের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব কমবে ৭০ কিলোমিটার।
গত শনিবার সকাল থেকে সিলেট নগরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এ সময় তিনি সুনামগঞ্জসহ বৃহত্তর সিলেটের উন্নয়নে তার সরকারের নানাবিধ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরবাসীকে ভালোবাসেন বিধায় বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাকে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করছি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সুনামগঞ্জ আর অবহেলিত জেলা থাকবে না। সুনামগঞ্জ হবে পর্যটকদের জন্য উত্তম স্থান। দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমিরা ছুটে আসবেন এবং হাওরপাড়ের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এসএইচ/আরসি-০১