টেস্ট স্কোয়াডে চমক সিলেটের রাজা

রাফিদ চৌধুরী


নভেম্বর ২৩, ২০২১
১০:২৪ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২৩, ২০২১
১০:২৪ অপরাহ্ন



টেস্ট স্কোয়াডে চমক সিলেটের রাজা
# দলে সিলেট বিভাগের তিন মুখ

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সিলেট বিভাগীয় দলে তার অভিষেকটা মোটেও সুখকর ছিল না। বছর দুই আগে বরিশালের বিপক্ষে সেই ম্যাচের মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই তিনি ২৭টি নো বল দিয়েছিলেন। ফলে পরের ম্যাচে একাদশে জায়গা হারান। কিন্তু বোলিং কোচ নাজমুল হোসেন আস্থা হারাননি। দলের সঙ্গে রেখে তাকে পরিচর্যা করেন। গুরুর সেই আস্থার প্রতিদান দিতে খুব বেশি সময় নেননি। রেজাউর রহমান রাজা নামের সিলেটের সেই পেসার গতকাল সোমবার জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দলের টেস্ট স্কোয়াডে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের জন্য ১৬ সদস্যের স্কোয়াডে চমক হয়ে এসেছে সিলেট বিভাগীয় দলের খেলোয়াড় রেজাউর রহমান রাজার নাম। ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার কুরুয়া বাজার গ্রামে রাজার জন্ম। ঘোষিত টেস্ট স্কোয়াডে জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত দুই সিলেটি খেলোয়াড় আবু জায়েদ রাহী ও এবাদত হোসেনের নামও রয়েছে।

সিলেট বিভাগীয় দল তখন পেসার শূন্য। রাহী, এবাদত ও খালেদরা জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। তানজিম হাসান সাকিব অনুর্ধ্ব ১৯ দলে। বাধ্য হয়ে বয়সভিত্তিক দলের কয়েকজন পেসারকে ডাকা হলো। নেটে বল করা পেসারদের একজন ছিলেন সবার চেয়ে আলাদা। তার রিস্ট পজিশন, রানিংসহ সবকিছু বোলিং কোচ নাজমুল হোসেনের নজর কাড়ে। কোচের সেই মুগ্ধতা তাকে সুযোগ করে দেয় বিভাগীয় দলের হয়ে নাম লেখানোর।

তবে অভিষেকটা মোটেও সুখকর হয়নি। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ২৭টি নো বলে বিষণœতার মেঘ ভর করে কোচ রাজিন সালেহ ও বোলিং কোচ নাজমুল হোসানের চোখে-মুখে। তবে আস্থা হারাননি নাজমুল। মধ্যাহ্ন বিরতিতে মাঠে নিয়ে তাঁকে করেছেন নিবিড় অনুশীলন। শিখিয়েছেন নো বোল এড়ানোর কৌশল। পুরো ম্যাচে আরও একটি দুটি নো বল দিলেও কৌশলটা ঠিকই আয়ত্ব করে নেন।

পরের ম্যাচে একাদশে জায়গা হারোনাটা অনুমিতই ছিল। হলোও তাই। তবে বোলিং কোচ নাজমুলের অনুরোধে কোচ রাজিন সালেহ তাকে দলের সঙ্গেই রাখেন। যখনই সময় হয়েছে কোচের সঙ্গে করেছেন অনুশীলন। ধীরে ধীরে কোচের শেখানো কৌশলগুলো রপ্ত করতে থাকেন। নিবিড় পরিচর্যা শেষে পরের তিন ম্যাচে কোচ আবার তখন দলের সুযোগ করে দেন। তিন ম্যাচে ২০ উইকেট শিকার করে নিলে দুই কোচও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন।

সেই থেকে সিলেটের রেজাউর রহমান রাজাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে লিস্টে ক্রিকেটে জায়গা করে নেন। পরে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর হয়ে ক্রিকেটের সীমিত সংস্করণে নাম লেখান এই পেসার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সাফল্য অবশেষে খুলে দিল তাকে জাতীয় দলের দরজা।

২২ বছর বয়সী পেসার রাজা সিলেট বিভাগ ও পূর্বাঞ্চলের হয়ে ১০টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচে ৩৩ উইকেট নিয়েছেন। এবারের জাতীয় লিগে তিন ম্যাচে নিয়েছেন ১২ উইকেট।

দলে তার অন্তর্ভুক্তিতে দারুণ খুশি সিলেট বিভাগীয় দলের বোলিং কোচ নাজমুল হোসেন। সিলেট মিররের সঙ্গে কথা হলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাজা জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায় আমি দারুণ খুশি। ছেলেটা দারুণ প্রতিভাবান। সে যেন জাতীয় দলের হয়ে কমপক্ষে টানা ১০ বছর খেলতে পারে আমি সে কামনা করি।’

তিনি বলেন, ‘ছেলেটাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, সেদিনই মনে হয়েছিল দারুণ প্রতিভাবান। রাজিন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই প্রথম ম্যাচে তাকে জায়গা দেই। কিন্তু সে ভালো খেলেনি। তারপরও রাজার প্রতিভা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ ছিল না। কারণ সে এসব খুটিনাটি বিষয় নিয়ে আগে কাজ করেনি বলেই আমাদের মনে হয়েছিল। তাই দলের সঙ্গে রেখেছি। যখনই সুযোগ পেয়েছি, তখনই আলাদাভাবে তাকে নিয়ে কাজ করেছি। আমরা যেমন আস্থা রেখেছিলাম তার ওপর। সে আমাদের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছে। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।’

সিলেট বিভাগীয় দলের কোচ রাজিন সালেহ সিলেট মিররকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ। সিলেট থেকে আরও একজন পেসার উঠে এসেছে। রাজাকে নিয়ে আমাদের বোলিং কোচ নাজমুল প্রচুর পরিশ্রম করেছে। আমরা বিশ্বাস রেখেছিলাম তার ওপর। সে বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়েছে। আমি তাই ভীষণ খুশি হয়েছি। তার আগামী দিনগুলোও সাফল্যময় হোক।’

আরসি-১৬