নবীগঞ্জে গৃহবধু হত্যার ঘটনায় মামলা, স্বামীসহ আসামী ৫

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি


ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২২
০৯:৫৮ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২২
০৯:৫৮ অপরাহ্ন



নবীগঞ্জে গৃহবধু হত্যার ঘটনায় মামলা, স্বামীসহ আসামী ৫

নবীগঞ্জে গৃহবধু রাজনা বেগম হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার স্বামী জাকারিয়া আহমদসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা (নং-০৪ তারিখ ০২-০২-২০২২ইং) দায়ের হয়েছে। নিহত রাজনা বেগমের ভাই সুফি মিয়া বাদী হয়ে উক্ত মামলা দায়ের করেন।

এদিকে ঘটনার ৩ দিন অতিবাহিত হলেও ঘাতকদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার পর থেকে আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ব্যাপক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া নিহত রাজনা বেগমের পরিবারে এখনও চলছে শোকের মাতম। মেয়ে রাজনা হত্যার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন রাজনার বৃদ্ধা মা মজেদা বেগম। পরিবারের লোকজন ঘাতকদের ফাঁসি দাবী করেছেন।

উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ থানা পুলিশ সোমবার (৩১ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় উপজেলার রসুলগঞ্জ বাজারস্থ ভাড়াটে তালাবদ্ধ ঘর থেকে তালা ভেঙ্গে রাজনা বেগম (২০) নামের এক গৃহবধুর হাত-পা, মুখ বাঁধা অবস্থায় গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বটি দা উদ্ধার করে পুলিশ। কে বা কারা গৃহবধু রাজনাকে হত্যা করেছে তা নিশ্চিত করে না বললেও সন্দেহের তীর তার স্বামীর দিকে যাচ্ছে।

ঘটনার পরপরই রাজনার স্বামী কৌশলে পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত পুলিশের নাগালের বাহিরে রয়েছে সে। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ প্রযুক্তির সহযোগিতায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানাগেছে। রাজনা বেগমের স্বামী জাকারিয়া আহমদ (২৫) বড় আলীপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার (পালক) ছেলে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মঙ্গলবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়। ওই দিন বিকেলে তার মরদেহ পশ্চিম তিমিরপুর কবরস্হানে দাফন করা হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড় আলীপুর গ্রামের সফিক মিয়ার চাচাতো ভাই নিঃসন্তান সবুজ মিয়া ৩ ছেলে-মেয়েসহ জাকারিয়া আহমদ’র মাকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে সবুজ মিয়ার তত্ত্বাবধানে বড় আলীপুর গ্রামে বেড়ে উঠেন জাকারিয়া। সবুজ মিয়াই আলোচনা করে পশ্চিম তিমিরপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছোট মেয়ে রাজনা বেগমকে প্রায় ৫ মাস আগে বিয়ে করান।

বিয়ের কিছুদিন পরই স্ত্রী রাজনা বেগমকে যৌতুকের টাকাসহ বিভিন্ন অজুহাতে মারপিট করতো জাকারিয়া। স্থানীয় লোকজন ঘটনা আপোষে সমাধান করে দিয়েছেন বলেও।

ঘটনার মাস খানেক পুর্বে একটি মিশুক গাড়ী কিনে দেয়ার জন্য ১ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করেন। ওই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করাই রাজনা বেগমের কাল হল। ঘটনার দিন দুপুরে রাজনাকে তার স্বামী মারপিট করলে গৃহবধু রাজনা রসুলগঞ্জ বাজারে বিয়ের উকিল নজর আলীর কাছে বিচার দেন। নজর আলী বিষয়টি রাজনার পরিবারকে জানিয়ে বিকালে সমাধানের আশ্বাস দেন। বিকাল প্রায় ৫ টার দিকে রাজনার মা মজেদা বেগমসহ নজর আলী জাকারিয়ার ভাড়াটে বাসায় যান। এ সময় জাকারিয়াকে বাসার সামনে রাস্তার উপর দেখে তারা ঘরে যেতে বলেন। চতুর জাকারিয়া দোকান থেকে আসতেছি বলে তাদেরকে বাসায় পাটিয়ে সিটকে পড়ে ঘরে বাহির দিকে তালা লাগানো দেখে তাদের সন্দেহ হয়।

এ সময় জাকারিয়াকে খোঁজাখুঁজি করে বাজারে না পেয়ে তারা বাজার কমিটির সভাপতি সেকুল মিয়ার শরণাপন্ন হন। পরে বাজার কমিটির সভাপতিসহ স্থানীয় লোকজন দরজার ফাঁক করে ভিতরে রাজনা বেগমের নিথড় দেহ দেখতে পান। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ হাত পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় রাজনা গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছেন। নির্মম এই হত্যাকান্ডটি জাকারিয়া এককভাবে করেছে তা মানতে নারাজ মৃতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন। 

এ ব্যাপারে নিহত রাজনার মা মজেদা বেগম জানান, মিশুক কিনার জন্য ১ লাখ টাকা দাবী করে জাকিারিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। তাদের দাবি মিটাতে অক্ষমতা জানালে মেয়ে রাজনার উপর অমানুষিক নির্যাতন নেমে আসে। কে জানতো ১ লাখ টাকার কারণে আমার মেয়ে রাজনা বেগমকে এভাবে জীবন দিতে হবে। এই কথা বলেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রাজনার বৃদ্ধা মা। এক পর্যায়ে তিনি মুর্ছা যান। নিহত রাজনা বোন স্বপ্না বেগম, নাসিমা বেগম ও নাসিরা বেগম ছোট বোন রাজনার মৃত্যুকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।

তাদের দাবী একটাই যারা তাদের বোনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দিতে হবে। রসুলগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সেকুল মিয়া বলেন, জাকারিয়া বড় আলীপুর গ্রামের সবুজ মিয়ার পালক পুত্র। উনার কোন সন্তানাধি না থাকায় জাকারিয়াসহ তারা ৩ ভাই-বোনকে সাথে নিয়ে তাদের মাকে বিয়ে করেন সবুজ মিয়া। ঘটনার বিষয়ে বলেন, রাজনার মা তাকে রাজনার বাসায় আসতে বলেন। এখানে এসে ঘরে তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে স্থানীয়দের সন্দেহের কারনে দরজা ফাঁক করে রাজনার নিথড় দেহ হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেই। পুলিশ তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে গলাকাটা রাজনার মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ সময় হত্যা কাজে ব্যবহৃত বটি দা উদ্ধার করা হয়। 

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ মোঃ ডালিম আহমদ জানান, এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে মৃতের স্বামীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। পুলিশ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনসহ দায়ীদের গ্রেপ্তারে প্রযুক্তির সহায়তায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি খুব শীঘ্রই ঘটনার মুল আসামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আরসি-১৩