কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে পারবে না প্রধানমন্ত্রী

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ০৫, ২০২২
০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ০৫, ২০২২
০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন



কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে পারবে না প্রধানমন্ত্রী

দেশবাসীকে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কিছু বলা থেকে এবং কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে যায় এমন ঘটনা বড় করে দেখানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, কেউ কোনো ধর্মের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারবে না। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কিছু কেউ বলতে পারবে না। এটা যে কোনো ধর্মের জন্যই প্রযোজ্য। কারণ, এটা কারো বিশ্বাস, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস।’ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে দুর্গাপূজা উপলক্ষে মঙ্গলবার দেশের হিন্দু সম্প্রদায়েরর সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। 

তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের কোনো এলাকায় সংঘটিত কোনো ঘটনাকে বড় করে দেখাবেন না, বরং আপনাদের সবার কাছে আমার অনুরোধ ওই ঘটনার বিরুদ্ধে সরকারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে নজর দিন।’

তিনি দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হিন্দু জনগণসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাইব এবং আশা করি আপনারা সহযোগিতা করবেন। তিনি আরো বলেন, সরকার সর্বদা দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা বা ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করছে এবং তা বজায় রেখে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, কাউকে কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করতে দেওয়া হবে না, ধর্ম হলো একজনের বিশ্বাস। এটি কারো আল্লাহর প্রতি বা সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস; আমাদের সেই চেতনা নিয়েই চলতে হবে। 

তিনি বলেন, এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম একটি অত্যন্ত উদার ও মহৎ ধর্ম এবং ইসলামে অন্য সব ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ রয়েছে।

শেখ হাসিনা সুরা কাফিরুনের উল্লেখ করে বলেন, এতে বলা হয়েছে যে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করবে এবং সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। এবং আমরা এটি আমাদের হৃদয় থেকে বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে সরকার সর্বদা সতর্ক রয়েছে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘যখনই কোনও দুর্ঘটনা ঘটে তখনই সর্বদা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কারণ, আমরা চাই যে এই দেশের সব নাগরিক তাদের ধর্ম যাই হোক না কেন তারা নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সমভাবে পালন করবে।’

পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়া উপলক্ষে হিন্দু ভক্তদের বধেশ্বর মন্দিরের দিকে যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে মৃত্যুর জন্য সরকারপ্রধান গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ সব ধর্মের প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব ঐক্যবদ্ধভাবে উদযাপন করে যা খুবই অনন্য। এটা আমাদের বড় সাফল্য যে আমরা এই চেতনা সমুন্নত রাখছি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে এবং উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে।

তিনি সবাইকে প্রতি ইঞ্চি জমি ব্যবহার করে কিছু না কিছু উৎপাদনের জন্য অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, ‘কারণ, অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়েছে, আমি জাতিসংঘে গিয়েছিলাম যেখানে আমি অনেক বিশ্ব নেতার সঙ্গে আলোচনা করেছি। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। সবাই খুব উদ্বিগ্ন এবং আশঙ্কা করছেন যে ২০২৩ সালে একটি গুরুতর দুর্ভিক্ষ হতে পারে যখন অর্থনৈতিক মন্দা আরও গভীর হবে’।

এ বিষয়ে এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জনগণ আছে, আমাদের খুব উর্বর জমি আছে, কোনো জমি অনাবাদি হতে দেবেন না। আপনি যা পারেন তা উৎপাদন করুন এবং বিদ্যুৎ ও পানিসহ সবকিছু ব্যবহারে কঠোরতা বজায় রাখুন। আমাদের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে বুদ্ধির সঙ্গে কাজ করতে হবে’।

প্রধানমন্ত্রী সমাজের বিত্তশালীদের কল্যাণ ট্রাস্টকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

এ লক্ষ্যে তিনি হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তাতে সিড মানি দান করেছেন উল্লেখ করে বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক ধনী ব্যক্তি রয়েছেন এবং তারা অনুদানের পাশাপাশি পূজা ও অন্যান্য উৎসবে প্রচুর ব্যয় করেন। আপনারা যদি আপনাদের পূজা বা উৎসবের খরচের একটি অংশ কল্যাণ ট্রাস্টে দান করেন, তবে, তা অসহায় মানুষকে সহায়তা করতে পারে’ ।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে তারা (বিত্তশালীরা) ভবিষ্যতে এতে মনোযোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আহ্বান বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম অন্যান্য ধর্মের লোকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। কারণ, সরকার সবার জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছে। 


এসই/০২