একাত্তরে পাকিস্তানি গণহত্যার স্বীকৃতির প্রস্তাব মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ১৫, ২০২২
১১:৫৯ অপরাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৬, ২০২২
০৩:০১ পূর্বাহ্ন



একাত্তরে পাকিস্তানি গণহত্যার স্বীকৃতির প্রস্তাব মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। ফাইল ছবি

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী যে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল, সেজন্য দেশটিকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাবনা (রেজল্যুশন) উত্থাপন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে।

শুক্রবার হাউসের ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা রোহিত খান্না এবং রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা সিভ শ্যাবট এই রেজল্যুশন উত্থাপন করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতের বৃহত্তম বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া।

রেজল্যুশন উত্থাপনের পর শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) এক টুইটবার্তায় শ্যাবট বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে গণহত্যা চলেছিল, তা কখনও আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না। যারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার তাদের স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা বিশ্ব ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকবে এবং আমেরিকানদের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের জনগণও এ থেকে শিক্ষালাভ করতে পারবে।’

‘আরও একটি ব্যাপার হলো— ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে বিশ্বের যাবতীয় নিপীড়ক শক্তিকে আরও একবার এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে যে, এ ধরনের অপরাধ কখনও সহ্য করা বা ভুলে যাওয়ার মতো ব্যাপার নয়।’

‘আমি এবং আমার বন্ধু ও আইনপ্রণেতা রো (রোহিত) খান্না সহযোগিতায় কংগ্রেসে ১৯৭১ সালের ওই গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিতে এই রেজল্যুশন উত্থাপন করেছি। আমরা চাই ১৯৭১ সালে বর্তমান বাংলাদেশে যত বাঙ্গালী হিন্দু ও মুসলিম লোকজনকে হত্যা করেছে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী— তাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক এবং এই গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হোক।’

পৃথক এক টুইটবার্তায় রোহিত খান্না বলেন, ‘১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল। তাদের ৮০ শতাংশই ছিলেন হিন্দু। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনী যা করেছিল, পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যসব গণহত্যার মত সেটিও স্পষ্ট গণহত্যা।’

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি এই রেজল্যুশনকে স্বাগত জানিয়েছে। ’৭১ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান সেলিম রেজা নূর পিটিআইকে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত আমাদের দেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, আমরা তাতে সন্তুষ্ট।’

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মানবাধিকারকর্মী প্রিয়া সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশেল স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকীতে এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য গর্বের।’

বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ও ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার অ্যারোমা দত্ত পিটিআইকে বলেন, ‘আমার দাদা (পিতামহ) ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (৮৫) এবং আমার বাবা দিলীপ দত্তকে (৪০) বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল হানাদার বাহিনী। তারপর কুমিল্লার ময়নামতি ক্যাম্পে দুই সপ্তাহ নির্মম নির্যাতন করার পর খুন করা হয়ে তাদেরকে।’

‘আমরা চাই, ৭১ সালে যারা নিরপরাধ ও নিরস্ত্র লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করেছে, অসহায় নারীদের ধর্ষণ করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।’

এদিকে বাংলাদেশ এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ (এইচআরসিবিএম) এর নির্বাহী পরিচালক প্রিয়া সাহা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই ৫১ তম বার্ষিকীতে, আমরা আশা করি যে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করা হবে।


এসই/০৭